ঢাকা ০৩:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি ::
আমাদের নিউজপোর্টালে আপনাকে স্বাগতম... সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে...

নাটোরের বড়াইগ্রামের দুই কৃষক সৃষ্টি করলেন পরার্থপরতার অনন্য নজির

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৮:৪৩:৩৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৩ ১৬২ বার পড়া হয়েছে

সমাজ, রাষ্ট্র, পরিবার—সবখানেই আত্মপরতার সংস্কৃতি যখন প্রবলভাবে গেড়ে বসেছে, তখন নাটোরের বড়াইগ্রামের দুই কৃষক সৃষ্টি করলেন পরার্থপরতার অনন্য নজির। সাড়ে ১৭ কোটি মানুষের দেশে জমিই যেখানে সবচেয়ে মহার্ঘ, দুই কৃষক নিজেদের জমি দিলেন খাল খননে। এতে সরাসরি জলাবদ্ধতার ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাচ্ছে নাটোরের বড়াইগ্রাম, লালপুর এবং পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার ছয়টি মৌজার দুই হাজার একর ফসলি জমি ও পাঁচ শতাধিক বসতবাড়ি।

বড়াইগ্রাম উপজেলা প্রশাসনের বরাতে প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, ভারী বৃষ্টিপাত হলেই বড়াইগ্রামের দৌলতপুর ও কচুয়া, লালপুরের মহেশ্বর, টিটিয়া, মাঝগাঁও এবং ঈশ্বরদীর সুন্দরবাড়ি মৌজার দুই হাজার একর ফসলি জমি ও পাঁচ শতাধিক বসতবাড়ি পানিতে তলিয়ে যেত। মাত্র ৪০০ মিটার খাল খনন করা হলেই পানিনিষ্কাশন করা সম্ভব ছিল। তবে এ জন্য খাসজমির পাশাপাশি দৌলতপুরের শামসুল ইসলামের দেড় বিঘা ও ইসমাইল হোসেনের বাড়ির ভিটার দুই শতক জমির প্রয়োজন ছিল।
সম্প্রতি অতি বৃষ্টিতে এলাকাটি আবারও পানিতে তলিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু রাসেলের কাছে সমস্যাটি তুলে ধরেন। ইউএনও এলাকাটি পরিদর্শন করে দুই কৃষকের সঙ্গে দেখা করেন। জনস্বার্থে তাঁদের খাল খননের অনুমতি চাইলে তাঁরা তাতে সম্মত হন।

শুক্রবার শুরু হওয়া খাল খননের কর্মযজ্ঞ শেষ হয়েছে রোববার। এ কাজে পুরো এলাকার সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে কৃষকদের মুখে হাসি ফুটছে। জলাবদ্ধতার কারণে অনেক জমিতেই আবাদ করা সম্ভব হতো না। এখন তাঁরা সেখানে সারা বছর আবাদ করে ফসল ফলানোর স্বপ্ন দেখছেন।

ছয়টি মৌজার হাজারো মানুষের দুঃখের অবসান হওয়ায় জমিদাতা দুই কৃষক শামসুল ও ইসমাইলও আনন্দিত। প্রথম আলোর কাছে তাঁর অনুভূতি জানাতে গিয়ে শামসুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমার মতো শত শত কৃষক কষ্ট করছিলেন। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন। বিষয়টি আমার মনে লেগেছে। আমি খুশিমনেই জমি ছেড়ে দিয়েছি।’
সমাজের ওপরতলায় যখন যার যার আখের গোছানো এবং ব্যাংক ফাঁকা করে বিদেশে ডলার পাচার করে পুরো দেশকে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেওয়ার হাজারটা দৃষ্টান্ত দেখছি, তখন দুই কৃষক সর্বজনের স্বার্থে খুশিমনে নিজেদের জমি ছেড়ে দিচ্ছেন।

এ দৃষ্টান্ত আমাদের নিশ্চিতভাবেই আশা জাগায়। এত অনিয়মের মধ্যেও দেশটা যে উচ্ছন্নে যায়নি, তার পেছনে যে সমাজের নিচের তলার কৃষক, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের অবদান ও ত্যাগ রয়েছে, এটা তারই দৃষ্টান্ত।

পরার্থপরতার এই সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ুক সমাজের সবখানে। শামসুল ইসলাম ও ইসমাইল হোসেনকে আমাদের টুপিখোলা অভিবাদন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

নাটোরের বড়াইগ্রামের দুই কৃষক সৃষ্টি করলেন পরার্থপরতার অনন্য নজির

আপডেট সময় : ০৮:৪৩:৩৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৩

সমাজ, রাষ্ট্র, পরিবার—সবখানেই আত্মপরতার সংস্কৃতি যখন প্রবলভাবে গেড়ে বসেছে, তখন নাটোরের বড়াইগ্রামের দুই কৃষক সৃষ্টি করলেন পরার্থপরতার অনন্য নজির। সাড়ে ১৭ কোটি মানুষের দেশে জমিই যেখানে সবচেয়ে মহার্ঘ, দুই কৃষক নিজেদের জমি দিলেন খাল খননে। এতে সরাসরি জলাবদ্ধতার ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাচ্ছে নাটোরের বড়াইগ্রাম, লালপুর এবং পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার ছয়টি মৌজার দুই হাজার একর ফসলি জমি ও পাঁচ শতাধিক বসতবাড়ি।

বড়াইগ্রাম উপজেলা প্রশাসনের বরাতে প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, ভারী বৃষ্টিপাত হলেই বড়াইগ্রামের দৌলতপুর ও কচুয়া, লালপুরের মহেশ্বর, টিটিয়া, মাঝগাঁও এবং ঈশ্বরদীর সুন্দরবাড়ি মৌজার দুই হাজার একর ফসলি জমি ও পাঁচ শতাধিক বসতবাড়ি পানিতে তলিয়ে যেত। মাত্র ৪০০ মিটার খাল খনন করা হলেই পানিনিষ্কাশন করা সম্ভব ছিল। তবে এ জন্য খাসজমির পাশাপাশি দৌলতপুরের শামসুল ইসলামের দেড় বিঘা ও ইসমাইল হোসেনের বাড়ির ভিটার দুই শতক জমির প্রয়োজন ছিল।
সম্প্রতি অতি বৃষ্টিতে এলাকাটি আবারও পানিতে তলিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু রাসেলের কাছে সমস্যাটি তুলে ধরেন। ইউএনও এলাকাটি পরিদর্শন করে দুই কৃষকের সঙ্গে দেখা করেন। জনস্বার্থে তাঁদের খাল খননের অনুমতি চাইলে তাঁরা তাতে সম্মত হন।

শুক্রবার শুরু হওয়া খাল খননের কর্মযজ্ঞ শেষ হয়েছে রোববার। এ কাজে পুরো এলাকার সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে কৃষকদের মুখে হাসি ফুটছে। জলাবদ্ধতার কারণে অনেক জমিতেই আবাদ করা সম্ভব হতো না। এখন তাঁরা সেখানে সারা বছর আবাদ করে ফসল ফলানোর স্বপ্ন দেখছেন।

ছয়টি মৌজার হাজারো মানুষের দুঃখের অবসান হওয়ায় জমিদাতা দুই কৃষক শামসুল ও ইসমাইলও আনন্দিত। প্রথম আলোর কাছে তাঁর অনুভূতি জানাতে গিয়ে শামসুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমার মতো শত শত কৃষক কষ্ট করছিলেন। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন। বিষয়টি আমার মনে লেগেছে। আমি খুশিমনেই জমি ছেড়ে দিয়েছি।’
সমাজের ওপরতলায় যখন যার যার আখের গোছানো এবং ব্যাংক ফাঁকা করে বিদেশে ডলার পাচার করে পুরো দেশকে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেওয়ার হাজারটা দৃষ্টান্ত দেখছি, তখন দুই কৃষক সর্বজনের স্বার্থে খুশিমনে নিজেদের জমি ছেড়ে দিচ্ছেন।

এ দৃষ্টান্ত আমাদের নিশ্চিতভাবেই আশা জাগায়। এত অনিয়মের মধ্যেও দেশটা যে উচ্ছন্নে যায়নি, তার পেছনে যে সমাজের নিচের তলার কৃষক, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের অবদান ও ত্যাগ রয়েছে, এটা তারই দৃষ্টান্ত।

পরার্থপরতার এই সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ুক সমাজের সবখানে। শামসুল ইসলাম ও ইসমাইল হোসেনকে আমাদের টুপিখোলা অভিবাদন।