ঢাকা ০৩:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি ::
আমাদের নিউজপোর্টালে আপনাকে স্বাগতম... সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে...

মেডিকেল শিক্ষার্থীকে গুলি করা শিক্ষকের কাছ থেকে দুটি অস্ত্র উদ্ধার, এ পর্যন্ত যা জানা যাচ্ছে

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৮:৩৭:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ মার্চ ২০২৪ ৬৮ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ জেলায় শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে এক শিক্ষার্থীকে গুলি করার ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে দুটি আলাদা মামলা করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে দুটি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রসহ দেশীয় অস্ত্র।

সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানিয়েছেন, শিক্ষক রায়হান শরীফকে গতকাল আটক করা হয়েছে। কিছু আইনি প্রক্রিয়া শেষে আজ তাকে আদালতে হাজির করা হবে।

সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকে মেডিকেল কলেজে রয়েছেন তিনি। বর্তমানে সেখানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

তবে স্থানীয় সাংবাদিক হীরক গুণ জানিয়েছেন, সকালে গ্রেফতারকৃত শিক্ষকের শাস্তি দাবি করে মেডিকেল কলেজের সামনের রাস্তায় এবং ক্যাম্পাসের ভেতরে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ডে তাদের দাবির বিষয়টি তুলে ধরেন।

এর আগে সোমবার দুপুরের পর সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে ক্লাস চলার সময় এক শিক্ষার্থীকে লক্ষ্য করে গুলি চালান একজন শিক্ষক।

এতে আরাফাত আমিন তমাল নামে ওই শিক্ষার্থী আহত হন। পরে ওই শিক্ষককে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

এদিকে আহত শিক্ষার্থী বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার অবস্থা স্থিতিশীল।

ওই শিক্ষার্থীর বাবা আল আমিন জানিয়েছেন, সোমবার বিকেল চারটার দিকে তিনি তার ছেলে আহত হওয়ার খবর জানতে পারেন। পরে বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ আসেন তিনি।

তিনি ছেলের বন্ধুদের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন যে, পরীক্ষা চলার সময় এই ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় তিনি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সঠিক বিচার দাবি করেছেন।

আহত শিক্ষার্থী মেডিকেল কলেজটির তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। আর অভিযুক্ত শিক্ষক রায়হান শরীফ একই মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক।

কী ঘটেছিল?
পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান জানান, সোমবার দুপুরের পর বেলা আড়াইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

সেসময় অভিযুক্ত ওই শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছিলেন। এসময় শিক্ষার্থী তমাল কোন একটি বিষয় নিয়ে উত্তর দিতে না পারার কারণে তাকে গুলি করেন ওই শিক্ষক।

মি. রহমান বলেন, “ক্লাসে কোন একটি বিষয় নিয়ে ক্লাসে রেসপন্স করতে না পারার কারণে হঠাৎ করে শিক্ষক তার ব্যাগ থেকে অস্ত্রটা বের করে গুলি করে।”

এ ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানালে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। মি. রহমান জানান, ক্যাম্পাসে ওই সময়ে তাৎক্ষণিকভাবে বেশ উত্তেজনা দেখা দেয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে। অনেকে বিক্ষোভও করেন। তবে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পুলিশ সুপার জানান, ঘটনাস্থলে পৌঁছে শিক্ষার্থীদের শান্ত করার পাশাপাশি শিক্ষক রায়হান শরীফকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেসময় তার কাছে থাকা একটি অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়।

ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে বলেও জানান তিনি।

সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদেরকে ঘটনার বিষয়ে অবহিত করে। পরে তারা ঘটনাস্থলে যান। সেখানে শিক্ষার্থীরা বেশ বিক্ষুব্ধ ছিল বলে জানান তিনি। পরে তাদেরকে বুঝিয়ে শান্ত করা হয়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন ভিডিওতে ওই দিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই।

এরমধ্যে এক নারী শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, “আমাদের আজ একটা আইটেম চলতেছিল(ক্লাসে), সে আমাদের বলে, আমার কাছে পিস্তল পোষা পাখির মতো। সে একটা ফটোশ্যুট করার মতো আমাদের ভয় দেখায়। এরকম করে সে একজনকে টার্গেট করে এবং তাকে গুলি মেরে দেয়।”

“এ ঘটনা ঘটার পরে সে আমাদের বন্ধুকে হসপিটালে নিয়ে যেতে দেয়নি। সে আমাদের আটকানোর চেষ্টা করেছে।”

প্রত্যক্ষদর্শী একজন শিক্ষার্থী বলেন, ক্লাস শেষে তাদের একটা ভাইবা পরীক্ষার মতো ছিল। সেখানে সময় না থাকায় তিনি ত্রিশ জনকে একসাথে ডাকেন।

“সেখানে তমালকে একটা কোয়েশ্চেন করলো তমাল পারলো না। এরপরে সে তার আর্মসটা বের করলো, বের করে টানলো, লোড হয়তোবা আগে থেকেই করা ছিল, উনি জাস্ট ফায়ার হলো।”

একজন পুরুষ শিক্ষার্থী তার অভিযোগে বলেন, “সন্ধ্যা বেলায় আমাদের ওয়ার্ড থাকে। উনি বলে ওয়ার্ড মিস দিয়ে ওনার ক্লাসে যাইতে। আমরা গতকাল ওনার ক্লাসে যাই নাই, ওয়ার্ডে গেসি। যার কারণে উনি আমাদের উপর ক্ষেপে ছিল। আজকে ক্লাসে উনি ১০টা তরবারি নিয়ে আসছে, চাকু নিয়ে আসছে আমাদের ভয় দেখানোর জন্য।”

দুটি মামলা
পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান জানিয়েছেন, রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলা পুলিশ বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করেছে।

এই মামলায় তার বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র রাখার অভিযোগ তোলা হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, মি. শরীফ যে অস্ত্রটি ব্যবহার করে গুলি শিক্ষার্থীকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছেন সেটি অবৈধ ছিল।

আরেকটি মামলা দায়ের করেছে রায়হান শরীফের গুলিতে আহত শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালের বাবা বাদী হয়ে দায়ের করেছেন।

এই মামলাটিতে মি. শরীফের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।

“তমালের বাবা যে মামলাটি করেছেন সেখানে শ্রেণিকক্ষে শ্যুট করার বিষয়টি নিয়ে আসা হয়েছে। আর সেকেন্ড মামলাটি অবৈধ অস্ত্র অবৈধভাবে রাখার জন্য আনা হয়েছে।”

এবিষয়ে তমালের বাবা আল আমিন বলেন, “আমার ছেলেকে অ্যাটেমপ্ট টু মার্ডার করেছে। আমার এটাই অভিযোগ। আমি মামলা করেছি।”

‘একাধিক অস্ত্র উদ্ধার’
পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষক রায়হান শরীফের কাছ থেকে প্রাথমিকভাবে তার কাছ থেকে একটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয় যেটি ব্যবহার করে তিনি শিক্ষার্থীকে গুলি করেন।

আর আটকের পর পুলিশের সন্দেহ বাড়লে থানায় মি. শরীফকে প্রাথমিকভাবে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এতে পুলিশের কাছে কিছু ‘ক্লু’ আসে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি পরীক্ষা করলে অস্ত্র সম্পর্কিত আরো তথ্য পাওয়া যায় বলেও জানায় পুলিশ।

“আমরা তার মোবাইল ফোনের কিছু কনভারসেশন চেক করি। চেক করার পর আমরা কিছু ক্লু পাই। এই ক্লু’র ভিত্তিতে তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে তার কাছে আরও একটি অবৈধ অস্ত্র আছে বলে সে স্বীকার করে।”

পরে পুলিশ ওই অস্ত্রটিও উদ্ধার করে বলে জানায়।

“তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক একটি ব্যাগে আরো একটি অস্ত্র, ৮১ রাউন্ড গুলি এবং ০৮টি ছুরি আমরা উদ্ধার করি।”

মি. রহমান বলেন, পেশায় শিক্ষক হলেও তিনি কীভাবে অবৈধ অস্ত্র বহন করতেন এবং তিনি সেগুলো কীভাবে পেয়েছেন তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এরইমধ্যে তারা কিছু তথ্য পেলেও তদন্তের স্বার্থে তা প্রকাশ করতে চাননি।

অস্ত্র বহন এবং হুমকি-ধামকি ছাড়াও ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগও তুলেছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী।

এ বিষয়ে পুলিশ জানায়, শিক্ষার্থীদের বক্তব্য এবং সংবাদ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসা নানা ভিডিও যাচাই করে দেখছেন তারা। সব ধরনের অভিযোগ নিয়েই তদন্ত চলছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

‘আগেও নোটিশ দেয়া হয়েছে’
গ্রেফতারকৃত ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা নানা ধরনের অভিযোগের বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ ডা. আমিরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, এর আগে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা লিখিত বা মৌখিকভাবে কোন অভিযোগ জানায়নি।

তবে অনেকের মুখে মুখে এ ধরনের অভিযোগের কথা শুনেছেন তারা।

মি. চৌধুরী বলেন, ওই শিক্ষককে এ ধরনের আচরণের বিষয়ে এর আগে ডেকে সাবধান করা হয়েছে। তবে তাতে কোন পরিবর্তন বা সংশোধন না আসার কারণে একাধিকবার নোটিশও দেয়া হয়েছে।

তবে তারপরও একই ধরনের আচরণ করে আসছিলেন তিনি।

“তার কিছু আত্মীয় এখানে কাজ করে। তাদের দিয়েও কাউন্সেলিং করিয়েছি। অতীতে দুই বার শোকজ করা হয়েছে,” বলেন অধ্যক্ষ মি. চৌধুরী।

তিনি বলেন, অভিযুক্ত রায়হান শরীফকে বারবার জানানো হয়েছে যে, তিনি যেসব আচরণ করেন তা শিক্ষকতার আচরণের পরিপন্থী।

“গত ফেব্রুয়ারি মাসেও তাকে শেষবারের মতো শোকজ করা হয়েছে যে, যদি আপনি এর থেকে বিরত না থাকেন তাহলে আপনার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হবে। আমরা সেটার প্রসেসেই ছিলাম। তার মধ্যে এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেছে।”

এই ঘটনার তদন্তে এরইমধ্যে ঢাকা থেকে একটি তদন্ত কমিটি মেডিকেল কলেজটি পরিদর্শনে গেছেন। তাদের সমন্বয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এই তদন্তের প্রেক্ষিতেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানানো হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

মেডিকেল শিক্ষার্থীকে গুলি করা শিক্ষকের কাছ থেকে দুটি অস্ত্র উদ্ধার, এ পর্যন্ত যা জানা যাচ্ছে

আপডেট সময় : ০৮:৩৭:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ মার্চ ২০২৪

বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ জেলায় শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে এক শিক্ষার্থীকে গুলি করার ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে দুটি আলাদা মামলা করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে দুটি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রসহ দেশীয় অস্ত্র।

সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানিয়েছেন, শিক্ষক রায়হান শরীফকে গতকাল আটক করা হয়েছে। কিছু আইনি প্রক্রিয়া শেষে আজ তাকে আদালতে হাজির করা হবে।

সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকে মেডিকেল কলেজে রয়েছেন তিনি। বর্তমানে সেখানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

তবে স্থানীয় সাংবাদিক হীরক গুণ জানিয়েছেন, সকালে গ্রেফতারকৃত শিক্ষকের শাস্তি দাবি করে মেডিকেল কলেজের সামনের রাস্তায় এবং ক্যাম্পাসের ভেতরে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ডে তাদের দাবির বিষয়টি তুলে ধরেন।

এর আগে সোমবার দুপুরের পর সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে ক্লাস চলার সময় এক শিক্ষার্থীকে লক্ষ্য করে গুলি চালান একজন শিক্ষক।

এতে আরাফাত আমিন তমাল নামে ওই শিক্ষার্থী আহত হন। পরে ওই শিক্ষককে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

এদিকে আহত শিক্ষার্থী বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার অবস্থা স্থিতিশীল।

ওই শিক্ষার্থীর বাবা আল আমিন জানিয়েছেন, সোমবার বিকেল চারটার দিকে তিনি তার ছেলে আহত হওয়ার খবর জানতে পারেন। পরে বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ আসেন তিনি।

তিনি ছেলের বন্ধুদের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন যে, পরীক্ষা চলার সময় এই ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় তিনি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সঠিক বিচার দাবি করেছেন।

আহত শিক্ষার্থী মেডিকেল কলেজটির তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। আর অভিযুক্ত শিক্ষক রায়হান শরীফ একই মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক।

কী ঘটেছিল?
পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান জানান, সোমবার দুপুরের পর বেলা আড়াইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

সেসময় অভিযুক্ত ওই শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছিলেন। এসময় শিক্ষার্থী তমাল কোন একটি বিষয় নিয়ে উত্তর দিতে না পারার কারণে তাকে গুলি করেন ওই শিক্ষক।

মি. রহমান বলেন, “ক্লাসে কোন একটি বিষয় নিয়ে ক্লাসে রেসপন্স করতে না পারার কারণে হঠাৎ করে শিক্ষক তার ব্যাগ থেকে অস্ত্রটা বের করে গুলি করে।”

এ ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানালে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। মি. রহমান জানান, ক্যাম্পাসে ওই সময়ে তাৎক্ষণিকভাবে বেশ উত্তেজনা দেখা দেয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে। অনেকে বিক্ষোভও করেন। তবে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পুলিশ সুপার জানান, ঘটনাস্থলে পৌঁছে শিক্ষার্থীদের শান্ত করার পাশাপাশি শিক্ষক রায়হান শরীফকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেসময় তার কাছে থাকা একটি অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়।

ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে বলেও জানান তিনি।

সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদেরকে ঘটনার বিষয়ে অবহিত করে। পরে তারা ঘটনাস্থলে যান। সেখানে শিক্ষার্থীরা বেশ বিক্ষুব্ধ ছিল বলে জানান তিনি। পরে তাদেরকে বুঝিয়ে শান্ত করা হয়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন ভিডিওতে ওই দিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই।

এরমধ্যে এক নারী শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, “আমাদের আজ একটা আইটেম চলতেছিল(ক্লাসে), সে আমাদের বলে, আমার কাছে পিস্তল পোষা পাখির মতো। সে একটা ফটোশ্যুট করার মতো আমাদের ভয় দেখায়। এরকম করে সে একজনকে টার্গেট করে এবং তাকে গুলি মেরে দেয়।”

“এ ঘটনা ঘটার পরে সে আমাদের বন্ধুকে হসপিটালে নিয়ে যেতে দেয়নি। সে আমাদের আটকানোর চেষ্টা করেছে।”

প্রত্যক্ষদর্শী একজন শিক্ষার্থী বলেন, ক্লাস শেষে তাদের একটা ভাইবা পরীক্ষার মতো ছিল। সেখানে সময় না থাকায় তিনি ত্রিশ জনকে একসাথে ডাকেন।

“সেখানে তমালকে একটা কোয়েশ্চেন করলো তমাল পারলো না। এরপরে সে তার আর্মসটা বের করলো, বের করে টানলো, লোড হয়তোবা আগে থেকেই করা ছিল, উনি জাস্ট ফায়ার হলো।”

একজন পুরুষ শিক্ষার্থী তার অভিযোগে বলেন, “সন্ধ্যা বেলায় আমাদের ওয়ার্ড থাকে। উনি বলে ওয়ার্ড মিস দিয়ে ওনার ক্লাসে যাইতে। আমরা গতকাল ওনার ক্লাসে যাই নাই, ওয়ার্ডে গেসি। যার কারণে উনি আমাদের উপর ক্ষেপে ছিল। আজকে ক্লাসে উনি ১০টা তরবারি নিয়ে আসছে, চাকু নিয়ে আসছে আমাদের ভয় দেখানোর জন্য।”

দুটি মামলা
পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান জানিয়েছেন, রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলা পুলিশ বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করেছে।

এই মামলায় তার বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র রাখার অভিযোগ তোলা হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, মি. শরীফ যে অস্ত্রটি ব্যবহার করে গুলি শিক্ষার্থীকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছেন সেটি অবৈধ ছিল।

আরেকটি মামলা দায়ের করেছে রায়হান শরীফের গুলিতে আহত শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালের বাবা বাদী হয়ে দায়ের করেছেন।

এই মামলাটিতে মি. শরীফের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।

“তমালের বাবা যে মামলাটি করেছেন সেখানে শ্রেণিকক্ষে শ্যুট করার বিষয়টি নিয়ে আসা হয়েছে। আর সেকেন্ড মামলাটি অবৈধ অস্ত্র অবৈধভাবে রাখার জন্য আনা হয়েছে।”

এবিষয়ে তমালের বাবা আল আমিন বলেন, “আমার ছেলেকে অ্যাটেমপ্ট টু মার্ডার করেছে। আমার এটাই অভিযোগ। আমি মামলা করেছি।”

‘একাধিক অস্ত্র উদ্ধার’
পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষক রায়হান শরীফের কাছ থেকে প্রাথমিকভাবে তার কাছ থেকে একটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয় যেটি ব্যবহার করে তিনি শিক্ষার্থীকে গুলি করেন।

আর আটকের পর পুলিশের সন্দেহ বাড়লে থানায় মি. শরীফকে প্রাথমিকভাবে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এতে পুলিশের কাছে কিছু ‘ক্লু’ আসে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি পরীক্ষা করলে অস্ত্র সম্পর্কিত আরো তথ্য পাওয়া যায় বলেও জানায় পুলিশ।

“আমরা তার মোবাইল ফোনের কিছু কনভারসেশন চেক করি। চেক করার পর আমরা কিছু ক্লু পাই। এই ক্লু’র ভিত্তিতে তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে তার কাছে আরও একটি অবৈধ অস্ত্র আছে বলে সে স্বীকার করে।”

পরে পুলিশ ওই অস্ত্রটিও উদ্ধার করে বলে জানায়।

“তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক একটি ব্যাগে আরো একটি অস্ত্র, ৮১ রাউন্ড গুলি এবং ০৮টি ছুরি আমরা উদ্ধার করি।”

মি. রহমান বলেন, পেশায় শিক্ষক হলেও তিনি কীভাবে অবৈধ অস্ত্র বহন করতেন এবং তিনি সেগুলো কীভাবে পেয়েছেন তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এরইমধ্যে তারা কিছু তথ্য পেলেও তদন্তের স্বার্থে তা প্রকাশ করতে চাননি।

অস্ত্র বহন এবং হুমকি-ধামকি ছাড়াও ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগও তুলেছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী।

এ বিষয়ে পুলিশ জানায়, শিক্ষার্থীদের বক্তব্য এবং সংবাদ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসা নানা ভিডিও যাচাই করে দেখছেন তারা। সব ধরনের অভিযোগ নিয়েই তদন্ত চলছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

‘আগেও নোটিশ দেয়া হয়েছে’
গ্রেফতারকৃত ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা নানা ধরনের অভিযোগের বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ ডা. আমিরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, এর আগে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা লিখিত বা মৌখিকভাবে কোন অভিযোগ জানায়নি।

তবে অনেকের মুখে মুখে এ ধরনের অভিযোগের কথা শুনেছেন তারা।

মি. চৌধুরী বলেন, ওই শিক্ষককে এ ধরনের আচরণের বিষয়ে এর আগে ডেকে সাবধান করা হয়েছে। তবে তাতে কোন পরিবর্তন বা সংশোধন না আসার কারণে একাধিকবার নোটিশও দেয়া হয়েছে।

তবে তারপরও একই ধরনের আচরণ করে আসছিলেন তিনি।

“তার কিছু আত্মীয় এখানে কাজ করে। তাদের দিয়েও কাউন্সেলিং করিয়েছি। অতীতে দুই বার শোকজ করা হয়েছে,” বলেন অধ্যক্ষ মি. চৌধুরী।

তিনি বলেন, অভিযুক্ত রায়হান শরীফকে বারবার জানানো হয়েছে যে, তিনি যেসব আচরণ করেন তা শিক্ষকতার আচরণের পরিপন্থী।

“গত ফেব্রুয়ারি মাসেও তাকে শেষবারের মতো শোকজ করা হয়েছে যে, যদি আপনি এর থেকে বিরত না থাকেন তাহলে আপনার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হবে। আমরা সেটার প্রসেসেই ছিলাম। তার মধ্যে এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেছে।”

এই ঘটনার তদন্তে এরইমধ্যে ঢাকা থেকে একটি তদন্ত কমিটি মেডিকেল কলেজটি পরিদর্শনে গেছেন। তাদের সমন্বয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এই তদন্তের প্রেক্ষিতেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানানো হয়।