ঢাকা ০৩:৪৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি ::
আমাদের নিউজপোর্টালে আপনাকে স্বাগতম... সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে...

হালাল সনদ নীতিমালা’ আসলে কী? কেন প্রয়োজন হলো এ সনদের?

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৭:৫৪:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ১১৫ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশে সম্প্রতি ইসলামী শরিয়া মোতাবেক পণ্য উৎপাদন, আমদানি, রপ্তানি ও বাজারজাতকরণের সুবিধার্থে ‘হালাল সনদ নীতিমালা-২০২৩’ নামে একটি নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করেছে সরকার।

নীতিমালা অনুযায়ী, এখন থেকে কোন পণ্যের হালাল স্বীকৃতি পেতে চাইলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কাছে আবেদন করে হালাল সনদ ও লোগো নিতে হবে উৎপাদক প্রতিষ্ঠানকে।

হালাল সনদ কী?
ইসলামী শরিয়া আইনে মানুষের ভোগ বা ব্যবহারের জন্য যেসব পণ্যকে বৈধ করা হয়েছে, তাকে সাধারণভাবে হালাল পণ্য বলে। হালাল সনদ বলতে সাধারণভাবে শরিয়া মেনে পণ্য উৎপাদন করা হয়েছে তার প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতিকে বোঝায়।

এই মুহুর্তে বিশ্বে হালাল পণ্যের বাজার প্রায় তিনশো কোটি মার্কিন ডলারের মত। বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হওয়ায় এখানে হালাল পণ্যের যেমন বিশাল চাহিদা রয়েছে, তেমনি বিদেশে রপ্তানিরও ব্যাপক সুযোগ রয়েছে, বিশেষ করে মুসলিম প্রধান দেশগুলোতে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন বলছে, বাংলাদেশে যেসব প্রতিষ্ঠান হালাল পণ্য উৎপাদক, আমদানি, রপ্তানি ও বাজারজাত করতে চায়, তাদের সুবিধার্থেই নতুন এই নীতিমালা করা হয়েছে ।

‘হালাল সনদ নীতিমালা-২০২৩’ অনুযায়ী, সরকারের পক্ষ থেকে পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে হালাল সনদ ও লোগো প্রদান করবে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

সংস্থাটির কর্মকর্তা মি. পাটোয়ারী বলছেন, “পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে মুসলিম দেশুগুলোর অনেকে হালাল সনদ চায়। ফলে বাংলাদেশ থেকে যারা ওইসব দেশে হালাল পণ্য রপ্তানি করতে আগ্রহী, তাদের সুবিধার্থেই মূলত: এই নীতিমালা করা হয়েছে।”

হালাল সনদের বিষয়ে মুসলিম বিশ্বের জোট ওআইসির যেসব নির্দেশনা রয়েছে, প্রধানত সেটি অনুসরণ করছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

এছাড়া বিভিন্ন সময় তুরষ্ক এবং মালয়েশিয়ায় প্রচলিত ব্যবস্থাকেও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

নভেম্বরের ২১ তারিখে নীতিমালাটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। তবে, এই নীতিমালা প্রকাশের আগে ২০০৭ সাল থেকেই হালাল সনদ দিয়ে আসছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

তবে সেটি মূলত যারা মুসলিম দেশগুলোতে হালাল পণ্য রপ্তানি করছেন সেসব ব্যবসায়ীদের চাহিদার প্রেক্ষিতে করা হত।

“এতদিন আমরা সরকারের বিশেষ আদেশে এটি (সনদ) ইস্যু করতাম। এখন নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে সনদ ইস্যুর ক্ষমতা দেওয়া হলো,” বলেন মি. পাটোয়ারী।

তবে রপ্তানি বা দেশীয় বাজারে পণ্য উৎপাদন, বিপনন বা বাজারজাতকরণের জন্য এ নীতিমালা বাধ্যতামূলক নয় বলে জানিয়েছেন তিনি।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন বলছে, প্রাথমিকভাবে খাদ্যদ্রব্য, ভোগ্যপণ্য, ওষুধ এবং প্রসাধনসামগ্রীর ক্ষেত্রে এ নীতিমালা প্রযোজ্য হবে ।

সংস্থাটির হালাল সনদ বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ আবু ছালেহ পাটোয়ারী বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “খাদ্য, ভোগ্যপণ্য, প্রসাধনী এবং ওষুধের উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামী শরিয়া যেন মেনে চলা হয়, সেটি নিশ্চিত করতেই এই নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।”

তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরবসহ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট অনেক দেশে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে হালাল সনদ থাকা বাধ্যতামূলক। ফলে সরকারের এই পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন রপ্তানিকারকদের অনেকে।

এর আগে ২০২১ সালে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন বা বিএসটিআই মূলত মুসলিম প্রধান দেশগুলোর রপ্তানি বাজার ধরার লক্ষ্য নিয়ে প্রথম দেশীয় খাদ্যপণ্য এবং প্রসাধন সামগ্রীকে হালাল সার্টিফিকেট দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

তবে হালাল নীতিমালা প্রণয়নের ঘটনা প্রথমবার হলো বাংলাদেশে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

হালাল সনদ নীতিমালা’ আসলে কী? কেন প্রয়োজন হলো এ সনদের?

আপডেট সময় : ০৭:৫৪:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৩

বাংলাদেশে সম্প্রতি ইসলামী শরিয়া মোতাবেক পণ্য উৎপাদন, আমদানি, রপ্তানি ও বাজারজাতকরণের সুবিধার্থে ‘হালাল সনদ নীতিমালা-২০২৩’ নামে একটি নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করেছে সরকার।

নীতিমালা অনুযায়ী, এখন থেকে কোন পণ্যের হালাল স্বীকৃতি পেতে চাইলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কাছে আবেদন করে হালাল সনদ ও লোগো নিতে হবে উৎপাদক প্রতিষ্ঠানকে।

হালাল সনদ কী?
ইসলামী শরিয়া আইনে মানুষের ভোগ বা ব্যবহারের জন্য যেসব পণ্যকে বৈধ করা হয়েছে, তাকে সাধারণভাবে হালাল পণ্য বলে। হালাল সনদ বলতে সাধারণভাবে শরিয়া মেনে পণ্য উৎপাদন করা হয়েছে তার প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতিকে বোঝায়।

এই মুহুর্তে বিশ্বে হালাল পণ্যের বাজার প্রায় তিনশো কোটি মার্কিন ডলারের মত। বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হওয়ায় এখানে হালাল পণ্যের যেমন বিশাল চাহিদা রয়েছে, তেমনি বিদেশে রপ্তানিরও ব্যাপক সুযোগ রয়েছে, বিশেষ করে মুসলিম প্রধান দেশগুলোতে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন বলছে, বাংলাদেশে যেসব প্রতিষ্ঠান হালাল পণ্য উৎপাদক, আমদানি, রপ্তানি ও বাজারজাত করতে চায়, তাদের সুবিধার্থেই নতুন এই নীতিমালা করা হয়েছে ।

‘হালাল সনদ নীতিমালা-২০২৩’ অনুযায়ী, সরকারের পক্ষ থেকে পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে হালাল সনদ ও লোগো প্রদান করবে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

সংস্থাটির কর্মকর্তা মি. পাটোয়ারী বলছেন, “পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে মুসলিম দেশুগুলোর অনেকে হালাল সনদ চায়। ফলে বাংলাদেশ থেকে যারা ওইসব দেশে হালাল পণ্য রপ্তানি করতে আগ্রহী, তাদের সুবিধার্থেই মূলত: এই নীতিমালা করা হয়েছে।”

হালাল সনদের বিষয়ে মুসলিম বিশ্বের জোট ওআইসির যেসব নির্দেশনা রয়েছে, প্রধানত সেটি অনুসরণ করছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

এছাড়া বিভিন্ন সময় তুরষ্ক এবং মালয়েশিয়ায় প্রচলিত ব্যবস্থাকেও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

নভেম্বরের ২১ তারিখে নীতিমালাটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। তবে, এই নীতিমালা প্রকাশের আগে ২০০৭ সাল থেকেই হালাল সনদ দিয়ে আসছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

তবে সেটি মূলত যারা মুসলিম দেশগুলোতে হালাল পণ্য রপ্তানি করছেন সেসব ব্যবসায়ীদের চাহিদার প্রেক্ষিতে করা হত।

“এতদিন আমরা সরকারের বিশেষ আদেশে এটি (সনদ) ইস্যু করতাম। এখন নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে সনদ ইস্যুর ক্ষমতা দেওয়া হলো,” বলেন মি. পাটোয়ারী।

তবে রপ্তানি বা দেশীয় বাজারে পণ্য উৎপাদন, বিপনন বা বাজারজাতকরণের জন্য এ নীতিমালা বাধ্যতামূলক নয় বলে জানিয়েছেন তিনি।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন বলছে, প্রাথমিকভাবে খাদ্যদ্রব্য, ভোগ্যপণ্য, ওষুধ এবং প্রসাধনসামগ্রীর ক্ষেত্রে এ নীতিমালা প্রযোজ্য হবে ।

সংস্থাটির হালাল সনদ বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ আবু ছালেহ পাটোয়ারী বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “খাদ্য, ভোগ্যপণ্য, প্রসাধনী এবং ওষুধের উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামী শরিয়া যেন মেনে চলা হয়, সেটি নিশ্চিত করতেই এই নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।”

তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরবসহ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট অনেক দেশে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে হালাল সনদ থাকা বাধ্যতামূলক। ফলে সরকারের এই পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন রপ্তানিকারকদের অনেকে।

এর আগে ২০২১ সালে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন বা বিএসটিআই মূলত মুসলিম প্রধান দেশগুলোর রপ্তানি বাজার ধরার লক্ষ্য নিয়ে প্রথম দেশীয় খাদ্যপণ্য এবং প্রসাধন সামগ্রীকে হালাল সার্টিফিকেট দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

তবে হালাল নীতিমালা প্রণয়নের ঘটনা প্রথমবার হলো বাংলাদেশে।