ঢাকা ০৩:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি ::
আমাদের নিউজপোর্টালে আপনাকে স্বাগতম... সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে...

দুই সপ্তাহেও অ্যালেক্সেই নাভালনির মরদেহ পাবে না পরিবার

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:৩৩:২৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ২৮ বার পড়া হয়েছে

রাশিয়ার কারাগারে মারা যাওয়া দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সবচেয়ে কট্টর সমালোচক অ্যালেক্সেই নাভালনির মরদেহ দুই সপ্তাহের মধ্যে হস্তান্তর করা হবে না বলে জানানো হয়েছে তার পরিবারকে।

নাভালনির একজন প্রতিনিধি জানান, তার মাকে জানানো হয়েছে যে রাসায়নিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য মরদেহ দুই সপ্তাহ রাখা হবে।

নাভালনির মরদেহটি কোথায় রাখা হয়েছে সে বিষয়টি এখনও নিশ্চিত করেনি রুশ কর্তৃপক্ষ। সেটি জানতে চাওয়ার সকল চেষ্টাই ব্যহত করে দেয়া হচ্ছে।

মরদেহ লুকানোর অভিযোগ করেছেন নাভালনির স্ত্রী।

সোমবার এক ভিডিও বার্তায় নাভালনির স্ত্রী ইউলিয়া লাভালনায়া অঙ্গীকার করেছেন যে তিনি তার স্বামীর ‘মুক্ত রাশিয়া’র স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যাবেন। এই ভিডিও বার্তায় স্বামীর মৃত্যুর জন্য সরাসরি প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে দায়ী করেছেন তিনি।

তিনি আরও অভিযোগ করেন যে নাভালনির শরীর থেকে ‘নোভিচক নার্ভ এজেন্ট’ এর চিহ্ন গায়েব করার জন্য মরদেহ লুকিয়ে রাখা হয়েছে।

মিজ নাভালনায়া যখন কথা বলছিলেন, তখন দুঃখ ও রাগে তার কণ্ঠস্বর কেঁপে কেঁপে উঠছিলো। তিনি দর্শকদেরকে তার পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন এবং বলেছেন “যারা আমাদের ভবিষ্যতকে হত্যা করার সাহস দেখিয়েছে তাদের প্রতি ক্রোধ ও ঘৃণা প্রদর্শন করুন।”

বিশ্বের সবচেয়ে কঠোর কারাগার হিসেবে পরিচিত আর্কটিক পেনাল কলোনিগুলোর একটিতে বন্দি থাকা অবস্থায় গত শুক্রবার তার মৃত্যুর খবর প্রকাশ করা হয়। কারাগার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কারাগারে হাঁটাহাঁটি করার সময় হঠাৎ-ই অচেতন হয়ে পড়ে যান তিনি, এরপর আর জ্ঞান ফেরেনি তার।

নাভালনির মৃত্যুর খবরটি ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে নাভালনির মা এবং আইনজীবী সেই প্রত্যন্ত কলোনিতে ছুটে গিয়েছিলেন।

কিন্তু কারাগারের মর্গ ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ মৃতদেহ খুঁজে বের করার চেষ্টায় বারবার ব্যহত করেছে।

সোমবার ক্রেমলিন জানায় যে নাভালনির মৃত্যুর বিষয়ে তদন্ত চলছে এবং এখন পর্যন্ত তদন্ত থেকে কোনও ফলাফল পাওয়া যায়নি।

পরে নাভালনির মুখপাত্র কিরা ইয়ারমিশ বলেন, তদন্তকারীরা নাভালনির মা লিউডমিলা নাভালনায়াকে বলেন যে যেহেতু রাসায়নিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে, তাই তারা আগামী দুই সপ্তাহের মাঝে মরদেহ হস্তান্তর করতে পারবে না।

ভিডিও বার্তায় নাভালনায়া আরও বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে শরীর থেকে নোভিচকের চিহ্ন উধাও হওয়ার জন্যই কর্তৃপক্ষ অপেক্ষা করছে।

গত এক দশক ধরে রুশ বিরোধী দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা নাভালনি ১৯ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছিলেন। তবে তিনি যেসব অপরাধে দণ্ডিত হয়েছিলেন, সেগুলোকে অনেকে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করেন।

পশ্চিমা নেতারাও নাভালনির মৃত্যুর জন্য সরাসরি প্রেসিডেন্ট পুতিনকেই দায়ী করেন।

সোমবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, “বাস্তবতা হলো: পুতিনই দায়ী। হয় তিনি আদেশ দিয়েছেন অথবা, এই মানুষটিকে (নাভালনি) যে পরিস্থিতি তিনি ফেলেছেন, তার জন্য তিনিই দায়ী।”

সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল বলেন, “পুতিন সরকার নাভালনিকে রাশিয়ার কারাগারে ধীরে ধীরে হত্যা করেছে।“

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই জানিয়েছে, নাভালনির মৃত্যুর পর তারা রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বিবেচনা করছে।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড ক্যামেরনও বলেছেন, তিনি আশা করছেন যে ব্রিটেন এবং জি-৭ জোটের বাকি ধনী দেশগুলো এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত রাশিয়ার নাগরিকদের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে।

তবে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, নাভালনির মৃত্যু নিয়ে পশ্চিমা রাজনীতিবিদদের মন্তব্য ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ’ ও ‘অগ্রহণযোগ্য’।

উল্লেখ্য, রুশ কারা কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছিলো, নাভালনি ‘সাডেন ডেথ সিনড্রোমে’ মারা গেছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

দুই সপ্তাহেও অ্যালেক্সেই নাভালনির মরদেহ পাবে না পরিবার

আপডেট সময় : ১১:৩৩:২৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

রাশিয়ার কারাগারে মারা যাওয়া দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সবচেয়ে কট্টর সমালোচক অ্যালেক্সেই নাভালনির মরদেহ দুই সপ্তাহের মধ্যে হস্তান্তর করা হবে না বলে জানানো হয়েছে তার পরিবারকে।

নাভালনির একজন প্রতিনিধি জানান, তার মাকে জানানো হয়েছে যে রাসায়নিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য মরদেহ দুই সপ্তাহ রাখা হবে।

নাভালনির মরদেহটি কোথায় রাখা হয়েছে সে বিষয়টি এখনও নিশ্চিত করেনি রুশ কর্তৃপক্ষ। সেটি জানতে চাওয়ার সকল চেষ্টাই ব্যহত করে দেয়া হচ্ছে।

মরদেহ লুকানোর অভিযোগ করেছেন নাভালনির স্ত্রী।

সোমবার এক ভিডিও বার্তায় নাভালনির স্ত্রী ইউলিয়া লাভালনায়া অঙ্গীকার করেছেন যে তিনি তার স্বামীর ‘মুক্ত রাশিয়া’র স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যাবেন। এই ভিডিও বার্তায় স্বামীর মৃত্যুর জন্য সরাসরি প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে দায়ী করেছেন তিনি।

তিনি আরও অভিযোগ করেন যে নাভালনির শরীর থেকে ‘নোভিচক নার্ভ এজেন্ট’ এর চিহ্ন গায়েব করার জন্য মরদেহ লুকিয়ে রাখা হয়েছে।

মিজ নাভালনায়া যখন কথা বলছিলেন, তখন দুঃখ ও রাগে তার কণ্ঠস্বর কেঁপে কেঁপে উঠছিলো। তিনি দর্শকদেরকে তার পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন এবং বলেছেন “যারা আমাদের ভবিষ্যতকে হত্যা করার সাহস দেখিয়েছে তাদের প্রতি ক্রোধ ও ঘৃণা প্রদর্শন করুন।”

বিশ্বের সবচেয়ে কঠোর কারাগার হিসেবে পরিচিত আর্কটিক পেনাল কলোনিগুলোর একটিতে বন্দি থাকা অবস্থায় গত শুক্রবার তার মৃত্যুর খবর প্রকাশ করা হয়। কারাগার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কারাগারে হাঁটাহাঁটি করার সময় হঠাৎ-ই অচেতন হয়ে পড়ে যান তিনি, এরপর আর জ্ঞান ফেরেনি তার।

নাভালনির মৃত্যুর খবরটি ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে নাভালনির মা এবং আইনজীবী সেই প্রত্যন্ত কলোনিতে ছুটে গিয়েছিলেন।

কিন্তু কারাগারের মর্গ ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ মৃতদেহ খুঁজে বের করার চেষ্টায় বারবার ব্যহত করেছে।

সোমবার ক্রেমলিন জানায় যে নাভালনির মৃত্যুর বিষয়ে তদন্ত চলছে এবং এখন পর্যন্ত তদন্ত থেকে কোনও ফলাফল পাওয়া যায়নি।

পরে নাভালনির মুখপাত্র কিরা ইয়ারমিশ বলেন, তদন্তকারীরা নাভালনির মা লিউডমিলা নাভালনায়াকে বলেন যে যেহেতু রাসায়নিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে, তাই তারা আগামী দুই সপ্তাহের মাঝে মরদেহ হস্তান্তর করতে পারবে না।

ভিডিও বার্তায় নাভালনায়া আরও বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে শরীর থেকে নোভিচকের চিহ্ন উধাও হওয়ার জন্যই কর্তৃপক্ষ অপেক্ষা করছে।

গত এক দশক ধরে রুশ বিরোধী দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা নাভালনি ১৯ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছিলেন। তবে তিনি যেসব অপরাধে দণ্ডিত হয়েছিলেন, সেগুলোকে অনেকে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করেন।

পশ্চিমা নেতারাও নাভালনির মৃত্যুর জন্য সরাসরি প্রেসিডেন্ট পুতিনকেই দায়ী করেন।

সোমবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, “বাস্তবতা হলো: পুতিনই দায়ী। হয় তিনি আদেশ দিয়েছেন অথবা, এই মানুষটিকে (নাভালনি) যে পরিস্থিতি তিনি ফেলেছেন, তার জন্য তিনিই দায়ী।”

সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল বলেন, “পুতিন সরকার নাভালনিকে রাশিয়ার কারাগারে ধীরে ধীরে হত্যা করেছে।“

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই জানিয়েছে, নাভালনির মৃত্যুর পর তারা রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বিবেচনা করছে।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড ক্যামেরনও বলেছেন, তিনি আশা করছেন যে ব্রিটেন এবং জি-৭ জোটের বাকি ধনী দেশগুলো এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত রাশিয়ার নাগরিকদের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে।

তবে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, নাভালনির মৃত্যু নিয়ে পশ্চিমা রাজনীতিবিদদের মন্তব্য ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ’ ও ‘অগ্রহণযোগ্য’।

উল্লেখ্য, রুশ কারা কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছিলো, নাভালনি ‘সাডেন ডেথ সিনড্রোমে’ মারা গেছেন।