ঢাকা ০৫:৪৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি ::
আমাদের নিউজপোর্টালে আপনাকে স্বাগতম... সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে...

গেটম্যানের ঘুমে প্রাণ গেল চালক-হেলপারের

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৭:৩১:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ৫২ বার পড়া হয়েছে

গেটম্যানের ঘুমে প্রাণ গেল চালক-হেলপারের
‘ওরে (নাজমুল) গাড়ি চালাতে মানা করেছি। কয়েক দিন আগে গাড়ি থেকে ওকে নামিয়ে নিয়ে গেছি। শনিবার চুরি করে আবার গাড়িতে গিয়েছে। সন্ধ্যায় ওর সাথে আমার কথা হয়েছে। আজ (রোববার) সকালে এসে ওর লাশ পেলাম। রেলগেট বন্ধ থাকলে আমার ছেলেকে এভাবে হারাতাম না। সব দোষ ওই গেটম্যানের।’

কথাগুলো বলতে গিয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠেন নিহত নাজমুলের মা নাসিমা বেগম।

শুধু নাসিমা বেগম নয়, ট্রাকটির মালিক শাহীন হোসেন ও স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদেরও একই অভিযোগ, রেলক্রসিং অরক্ষিত ছিল।

রোববার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি রেলগেট খোলা থাকায় যশোর থেকে চৌগাছাগামী ভুষি বহনকারী ট্রাকটি রেলক্রসিং পার হচ্ছিল। এ সময় উত্তরবঙ্গ থেকে ছেড়ে আসা রকেট মেইল চলে আসে ক্রসিংয়ে। এতে ট্রেনের ধাক্কায় দুমড়ে মুচড়ে যায় ট্রাকটি। ঘটনাস্থলেই মারা যান ট্রাকচালক ও হেলপার।

নিহতরা হলেন- ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার কাগমারী গ্রামের বাহাদুর মিয়ার ছেলে ট্রাক চালক পারভেজ হোসেন (৫০) ও মহেশপুর উপজেলার আজমপুর গ্রামের মৃত শহিদুল ইসলাম ওরফে শহিদের ছেলে হেলপার নাজমুল ইসলাম (৪০)।

জানা যায়, রোববার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে চিলাহাটি থেকে খুলনামুখী রকেট মেইল ট্রেনটি খুলনার উদ্দেশ্য যাচ্ছিল। ট্রেনটি যখন সদর উপজেলার চূড়ামনকাটি রেল ক্রসিংয় পার হচ্ছিল; এ সময় চৌগাছাগামী ভুষিবাহী একটি ট্রাকও চলে আসে। রেল ক্রসিংয়ের বার খোলা থাকাতে ট্রাকটি ক্রসিংয়ে ঢুকে পড়ে। এমন সময় এই দুর্ঘটনাটি ঘটে। এতে ট্রাকের হেলপার ও ড্রাইভার ঘটনাস্থলেই মারা যান। দুর্ঘটনার পরপরই ফায়ার সার্ভিস, রেলওয়ে পুলিশ, সদর পুলিশসহ প্রশাসন উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে।

চুড়ামনকাটি গ্রামের আনিসুর রহমান বলেন, আজ ভোর থেকেই ঘন কুয়াশায় আচ্ছাদিত ছিল। বাড়ির মধ্যে থেকে বিকট শব্দ শুনে রাস্তায় বের হয়ে দেখি রেললাইনের পাশে উল্টে আছে বড় ট্রাক। ট্রাকটি দেখেই বুঝলাম ট্রেনের ধাক্কা খেয়েছে। কাছে গিয়ে দেখি ট্রাকের ভিতরে দুটি মানুষ। তারা দুজনেই রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। এরপর পুলিশ আর ফায়ার সার্ভিস এসে ট্রাকে থাকা ভুষি সরিয়ে ট্রেনলাইন পরিষ্কার করে। আর নিহত দুইজনের লাশ যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

তিনি জানান, এই রেলক্রসিঙয়ে দায়িত্বে ছিলেন চুড়ামনকাঠি দাসপাড়া এলাকার সজল কুমার। তিনি গেট লাগানোর দায়িত্ব পালন না করে ঘুমিয়ে থাকায় বড় ধরনের দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।

ট্রাক হেলপার নাজমুলের মা নাসিমা বেগম বলেন, চার বছর আগে আমার স্বামী মারা গেছেন। আমার একটাই ছেলে। এই ছেলেটা আমার সংসার চালাত। এখন আমার কি হবে! আমার সব শেষে হয়ে গেছে। আমার আর কিছু নেই। ও নাজমুল…। তুই আমারে ফেলাইয়া কই গেলি রে… বাবা। আমার সংসারের কী হবে। তার সংসারে কোনো ছেলেমেয়েও নেই।

দুর্ঘটনার শিকার ট্রাকটির মালিক শাহীন হোসেন জানান, শনিবার ঢাকার সিটি মিল থেকে আমারে ট্রাকে করে ভুষি নিয়ে আসছিল। ভুষিগুলো দেওয়ার কথা ছিল চৌগাছার শফি স্টোরে। গেটম্যানের ভুলের কারণে এ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। ট্রেন আসার আগে গেটের বারটি লাগানো থাকলে এই দুর্ঘটনাটি ঘটতো না। গেটম্যানের দায়িত্ব অবহেলার কারণে আমার দুই কর্মচারীর প্রাণ গেল। একই সাথে আমার ট্রাকটি দুর্ঘটনায় শেষ হয়ে গেল।

যশোর সেনানিবাস ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা নাহিদ মামুন বলেন, সকাল ৫টা ৪৫ মিনিটে আমরা দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। ভুষিবোঝাই ট্রাকটি উল্টে ছিল তার সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায়। আমরা স্পট ডেড হিসেবে ট্রাকের চালক ও হেলপারকে উদ্ধার করি।

তিনি আরও বলেন, আমরা রেললাইনের উপরে পড়ে থাকা ভুষি পরিষ্কার করি। পরে পুলিশ এসে ট্রাকটি সরিয়ে ফেলে।

যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ট্রেনের সঙ্গে ট্রাকের ধাক্কায় ট্রাকচালক ও হেলপারের মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি জিআরপি পুলিশের। এ ঘটনায় আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি গেটম্যানের দায়িত্ব অবহেলার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনার পর গেটম্যান পলাতক রয়েছেন।

যশোর রেলের স্টেশনমাস্টার আয়নাল হাসান বলেন, ভোর সাড়ে ৫টার দিকে চিলাহাটি থেকে খুলনামুখী রকেট মেল ট্রেনটিতে দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পর খুলনাগামী সব রেললাইনে ট্রেন কিছুক্ষণ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে আবার ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

গেটম্যানের ঘুমে প্রাণ গেল চালক-হেলপারের

আপডেট সময় : ০৭:৩১:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩

গেটম্যানের ঘুমে প্রাণ গেল চালক-হেলপারের
‘ওরে (নাজমুল) গাড়ি চালাতে মানা করেছি। কয়েক দিন আগে গাড়ি থেকে ওকে নামিয়ে নিয়ে গেছি। শনিবার চুরি করে আবার গাড়িতে গিয়েছে। সন্ধ্যায় ওর সাথে আমার কথা হয়েছে। আজ (রোববার) সকালে এসে ওর লাশ পেলাম। রেলগেট বন্ধ থাকলে আমার ছেলেকে এভাবে হারাতাম না। সব দোষ ওই গেটম্যানের।’

কথাগুলো বলতে গিয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠেন নিহত নাজমুলের মা নাসিমা বেগম।

শুধু নাসিমা বেগম নয়, ট্রাকটির মালিক শাহীন হোসেন ও স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদেরও একই অভিযোগ, রেলক্রসিং অরক্ষিত ছিল।

রোববার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি রেলগেট খোলা থাকায় যশোর থেকে চৌগাছাগামী ভুষি বহনকারী ট্রাকটি রেলক্রসিং পার হচ্ছিল। এ সময় উত্তরবঙ্গ থেকে ছেড়ে আসা রকেট মেইল চলে আসে ক্রসিংয়ে। এতে ট্রেনের ধাক্কায় দুমড়ে মুচড়ে যায় ট্রাকটি। ঘটনাস্থলেই মারা যান ট্রাকচালক ও হেলপার।

নিহতরা হলেন- ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার কাগমারী গ্রামের বাহাদুর মিয়ার ছেলে ট্রাক চালক পারভেজ হোসেন (৫০) ও মহেশপুর উপজেলার আজমপুর গ্রামের মৃত শহিদুল ইসলাম ওরফে শহিদের ছেলে হেলপার নাজমুল ইসলাম (৪০)।

জানা যায়, রোববার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে চিলাহাটি থেকে খুলনামুখী রকেট মেইল ট্রেনটি খুলনার উদ্দেশ্য যাচ্ছিল। ট্রেনটি যখন সদর উপজেলার চূড়ামনকাটি রেল ক্রসিংয় পার হচ্ছিল; এ সময় চৌগাছাগামী ভুষিবাহী একটি ট্রাকও চলে আসে। রেল ক্রসিংয়ের বার খোলা থাকাতে ট্রাকটি ক্রসিংয়ে ঢুকে পড়ে। এমন সময় এই দুর্ঘটনাটি ঘটে। এতে ট্রাকের হেলপার ও ড্রাইভার ঘটনাস্থলেই মারা যান। দুর্ঘটনার পরপরই ফায়ার সার্ভিস, রেলওয়ে পুলিশ, সদর পুলিশসহ প্রশাসন উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে।

চুড়ামনকাটি গ্রামের আনিসুর রহমান বলেন, আজ ভোর থেকেই ঘন কুয়াশায় আচ্ছাদিত ছিল। বাড়ির মধ্যে থেকে বিকট শব্দ শুনে রাস্তায় বের হয়ে দেখি রেললাইনের পাশে উল্টে আছে বড় ট্রাক। ট্রাকটি দেখেই বুঝলাম ট্রেনের ধাক্কা খেয়েছে। কাছে গিয়ে দেখি ট্রাকের ভিতরে দুটি মানুষ। তারা দুজনেই রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। এরপর পুলিশ আর ফায়ার সার্ভিস এসে ট্রাকে থাকা ভুষি সরিয়ে ট্রেনলাইন পরিষ্কার করে। আর নিহত দুইজনের লাশ যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

তিনি জানান, এই রেলক্রসিঙয়ে দায়িত্বে ছিলেন চুড়ামনকাঠি দাসপাড়া এলাকার সজল কুমার। তিনি গেট লাগানোর দায়িত্ব পালন না করে ঘুমিয়ে থাকায় বড় ধরনের দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।

ট্রাক হেলপার নাজমুলের মা নাসিমা বেগম বলেন, চার বছর আগে আমার স্বামী মারা গেছেন। আমার একটাই ছেলে। এই ছেলেটা আমার সংসার চালাত। এখন আমার কি হবে! আমার সব শেষে হয়ে গেছে। আমার আর কিছু নেই। ও নাজমুল…। তুই আমারে ফেলাইয়া কই গেলি রে… বাবা। আমার সংসারের কী হবে। তার সংসারে কোনো ছেলেমেয়েও নেই।

দুর্ঘটনার শিকার ট্রাকটির মালিক শাহীন হোসেন জানান, শনিবার ঢাকার সিটি মিল থেকে আমারে ট্রাকে করে ভুষি নিয়ে আসছিল। ভুষিগুলো দেওয়ার কথা ছিল চৌগাছার শফি স্টোরে। গেটম্যানের ভুলের কারণে এ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। ট্রেন আসার আগে গেটের বারটি লাগানো থাকলে এই দুর্ঘটনাটি ঘটতো না। গেটম্যানের দায়িত্ব অবহেলার কারণে আমার দুই কর্মচারীর প্রাণ গেল। একই সাথে আমার ট্রাকটি দুর্ঘটনায় শেষ হয়ে গেল।

যশোর সেনানিবাস ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা নাহিদ মামুন বলেন, সকাল ৫টা ৪৫ মিনিটে আমরা দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। ভুষিবোঝাই ট্রাকটি উল্টে ছিল তার সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায়। আমরা স্পট ডেড হিসেবে ট্রাকের চালক ও হেলপারকে উদ্ধার করি।

তিনি আরও বলেন, আমরা রেললাইনের উপরে পড়ে থাকা ভুষি পরিষ্কার করি। পরে পুলিশ এসে ট্রাকটি সরিয়ে ফেলে।

যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ট্রেনের সঙ্গে ট্রাকের ধাক্কায় ট্রাকচালক ও হেলপারের মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি জিআরপি পুলিশের। এ ঘটনায় আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি গেটম্যানের দায়িত্ব অবহেলার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনার পর গেটম্যান পলাতক রয়েছেন।

যশোর রেলের স্টেশনমাস্টার আয়নাল হাসান বলেন, ভোর সাড়ে ৫টার দিকে চিলাহাটি থেকে খুলনামুখী রকেট মেল ট্রেনটিতে দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পর খুলনাগামী সব রেললাইনে ট্রেন কিছুক্ষণ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে আবার ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।