ঢাকা ০৩:২৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি ::
আমাদের নিউজপোর্টালে আপনাকে স্বাগতম... সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে...

কলেজে বিজ্ঞানশিক্ষার প্রকল্পে কাজের গতি কম, মান নিয়েও প্রশ্ন

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৬:১৭:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৪৫ বার পড়া হয়েছে

মাউশির ‘সরকারি কলেজসমূহে বিজ্ঞানশিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ’ প্রকল্পে পাঁচ বছরে ভৌত অবকাঠামোর অগ্রগতি মাত্র ৩০ শতাংশ।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশেই মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ভবেরচর বাজার। সেখান থেকে আরও বেশ কিছুটা দূরে গজারিয়া সরকারি কলেজ। গত ১৪ আগস্ট সেই কলেজে গিয়ে দেখা গেল সামনের দিকে পুরোনো ভবন। তবে ভেতরে ঢুকে চোখে পড়ল নতুন ছয়তলা একটি ভবন। নতুন ভবনটির নিচতলার একটি কক্ষে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে পড়াচ্ছিলেন একজন শিক্ষক। ভবনটি ছয়তলা হলেও লিফট নেই।

এই ভবনে লিফট না থাকায় যে সমস্যা হচ্ছে, সেটি উঠে এসেছে সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক প্রতিবেদনে। একই প্রতিবেদন বলছে, ২০১৮ সালে অনুমোদন পাওয়া ‘সরকারি কলেজসমূহে বিজ্ঞানশিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে সামগ্রিক কার্যক্রমের আর্থিক অগ্রগতি প্রায় ২৭ শতাংশ ও ভৌত অবকাঠামোর অগ্রগতি মাত্র ৩০ শতাংশ।

২০২২ সালের জুন পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে তা ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, চলমান এই প্রকল্পের সমন্বয়ের যেমন ঘাটতি আছে, আবার কাজের গতিও কম। গুণগত মানও ব্যাহত হয়েছে। এ জন্য কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে আরও নিবিড় তদারকি করাসহ বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। গত ৩০ জুন প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংস্থা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) ‘সরকারি কলেজসমূহে বিজ্ঞানশিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ’ শীর্ষক এই প্রকল্পের আওতায় দেশের ২০০টি সরকারি কলেজে বিজ্ঞানশিক্ষার সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ৪৭টি হোস্টেল নির্মাণ, বিদ্যমান তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইটি) সরঞ্জামের ব্যবস্থা উন্নত করার উদ্দেশ্য এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্প অনুমোদন পায় ২০১৮ সালের জুলাইয়ে।

আইএমইডির প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, মাঠপর্যায়ে যথাযথ সমীক্ষার ভিত্তিতে অনেক ক্ষেত্রেই যথাযথ চাহিদা নিরূপণ না করে একাডেমিক ভবন ও হোস্টেল নির্মাণের জন্য কলেজ নির্বাচন করা হয়েছে। জেলা পর্যায়ের কলেজগুলোতে বেশি ছাত্রছাত্রী ও হোস্টেলের চাহিদা বেশি। কিন্তু উপজেলা পর্যায়ের এমন অনেক কলেজে ছাত্রছাত্রী হোস্টেল করা হচ্ছে। আছে আরও নানা সমস্যা। যেমন পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া কলেজে ও কুড়িগ্রামের উলিপুর সরকারি কলেজ ভবন নির্মাণকাজ অনুমোদিত প্রাক্কলন যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি। এতে কাজের গুণগত মান ব্যাহত হয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্প প্রণয়নে স্থানীয় চাহিদার গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

অবশ্য এই প্রকল্পের পরিচালক খন্দকার মুজাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আইএমইডির প্রতিবেদনে যেসব পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে, সেগুলো সংশোধন করা হচ্ছে। আর লিফট স্থাপনের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন। আশা করা যাচ্ছে, তিন মাসের মধ্যে হয়ে যাবে।

আর প্রকল্পের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ভবন নির্মাণ, লিফট স্থাপনসহ প্রকল্পের ৮০ ভাগ কাজই করা হয় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে। ফলে সেখানে কিছু অসুবিধা হয়।

মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া সরকারি কলেজে গিয়ে দেখা যায়, নির্মাণকাজ গত বছরের ফেব্রুয়ারিতেই শেষ হয়েছে। এতে মোট শ্রেণিকক্ষ ২৬টি। ভবনের উদ্বোধনের অপেক্ষায় ব্যবহার হচ্ছে না।

অবশ্য গত ১৪ আগস্ট এই প্রতিবেদক কলেজটিতে সরেজমিন গিয়ে দেখতে পান, নিচতলায় ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। যদিও এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়নি। আর ভবনটি বিজ্ঞানের জন্য তৈরি হলেও এই কলেজে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী খুবই কম। কলেজটিতে উচ্চমাধ্যমিক ও ডিগ্রি পাস কোর্সে পড়ানো হয়। এর মধ্যে একাদশ শ্রেণিতে মোট ৩৯৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থী ২৭ জন। বাকিদের মধ্যে ২৯৬ জন মানবিকের ও ৭২ জন ব্যবসায় শিক্ষা শাখার। আর দ্বাদশ শ্রেণিতে ৪৫৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৭ জন বিজ্ঞানের। বাকিরা মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক জানান, এই কলেজে মূলত এলাকার ‘দুর্বল’ শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়। ফলে ফলও খুব ভালো হয় না। যেমন গত বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৪৮ শতাংশের কিছু বেশি।

আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সাল থেকে গত মার্চ পর্যন্ত মোট ৯৫টির মধ্যে ১৫টি প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ হয়েছে। আর ১৮টির মধ্যে ৫টি ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ এবং ৬টির মধ্যে ৫টির মেরামত ও সংস্কারকাজ শেষ হয়েছে। আর ৪৭টি হোস্টেলের মধ্যে ৩৫টির কাজ চলমান।

প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, কোনো কোনো কলেজে কাজের অগ্রগতি ভালো হলেও কোনো কলেজের কাজের অগ্রগতি খুবই কম। যেমন চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজে গত মার্চ পর্যন্ত বাস্তব অগ্রগতি মাত্র ৫ শতাংশ।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

কলেজে বিজ্ঞানশিক্ষার প্রকল্পে কাজের গতি কম, মান নিয়েও প্রশ্ন

আপডেট সময় : ০৬:১৭:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

মাউশির ‘সরকারি কলেজসমূহে বিজ্ঞানশিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ’ প্রকল্পে পাঁচ বছরে ভৌত অবকাঠামোর অগ্রগতি মাত্র ৩০ শতাংশ।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশেই মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ভবেরচর বাজার। সেখান থেকে আরও বেশ কিছুটা দূরে গজারিয়া সরকারি কলেজ। গত ১৪ আগস্ট সেই কলেজে গিয়ে দেখা গেল সামনের দিকে পুরোনো ভবন। তবে ভেতরে ঢুকে চোখে পড়ল নতুন ছয়তলা একটি ভবন। নতুন ভবনটির নিচতলার একটি কক্ষে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে পড়াচ্ছিলেন একজন শিক্ষক। ভবনটি ছয়তলা হলেও লিফট নেই।

এই ভবনে লিফট না থাকায় যে সমস্যা হচ্ছে, সেটি উঠে এসেছে সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক প্রতিবেদনে। একই প্রতিবেদন বলছে, ২০১৮ সালে অনুমোদন পাওয়া ‘সরকারি কলেজসমূহে বিজ্ঞানশিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে সামগ্রিক কার্যক্রমের আর্থিক অগ্রগতি প্রায় ২৭ শতাংশ ও ভৌত অবকাঠামোর অগ্রগতি মাত্র ৩০ শতাংশ।

২০২২ সালের জুন পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে তা ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, চলমান এই প্রকল্পের সমন্বয়ের যেমন ঘাটতি আছে, আবার কাজের গতিও কম। গুণগত মানও ব্যাহত হয়েছে। এ জন্য কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে আরও নিবিড় তদারকি করাসহ বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। গত ৩০ জুন প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংস্থা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) ‘সরকারি কলেজসমূহে বিজ্ঞানশিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ’ শীর্ষক এই প্রকল্পের আওতায় দেশের ২০০টি সরকারি কলেজে বিজ্ঞানশিক্ষার সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ৪৭টি হোস্টেল নির্মাণ, বিদ্যমান তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইটি) সরঞ্জামের ব্যবস্থা উন্নত করার উদ্দেশ্য এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্প অনুমোদন পায় ২০১৮ সালের জুলাইয়ে।

আইএমইডির প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, মাঠপর্যায়ে যথাযথ সমীক্ষার ভিত্তিতে অনেক ক্ষেত্রেই যথাযথ চাহিদা নিরূপণ না করে একাডেমিক ভবন ও হোস্টেল নির্মাণের জন্য কলেজ নির্বাচন করা হয়েছে। জেলা পর্যায়ের কলেজগুলোতে বেশি ছাত্রছাত্রী ও হোস্টেলের চাহিদা বেশি। কিন্তু উপজেলা পর্যায়ের এমন অনেক কলেজে ছাত্রছাত্রী হোস্টেল করা হচ্ছে। আছে আরও নানা সমস্যা। যেমন পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া কলেজে ও কুড়িগ্রামের উলিপুর সরকারি কলেজ ভবন নির্মাণকাজ অনুমোদিত প্রাক্কলন যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি। এতে কাজের গুণগত মান ব্যাহত হয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্প প্রণয়নে স্থানীয় চাহিদার গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

অবশ্য এই প্রকল্পের পরিচালক খন্দকার মুজাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আইএমইডির প্রতিবেদনে যেসব পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে, সেগুলো সংশোধন করা হচ্ছে। আর লিফট স্থাপনের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন। আশা করা যাচ্ছে, তিন মাসের মধ্যে হয়ে যাবে।

আর প্রকল্পের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ভবন নির্মাণ, লিফট স্থাপনসহ প্রকল্পের ৮০ ভাগ কাজই করা হয় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে। ফলে সেখানে কিছু অসুবিধা হয়।

মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া সরকারি কলেজে গিয়ে দেখা যায়, নির্মাণকাজ গত বছরের ফেব্রুয়ারিতেই শেষ হয়েছে। এতে মোট শ্রেণিকক্ষ ২৬টি। ভবনের উদ্বোধনের অপেক্ষায় ব্যবহার হচ্ছে না।

অবশ্য গত ১৪ আগস্ট এই প্রতিবেদক কলেজটিতে সরেজমিন গিয়ে দেখতে পান, নিচতলায় ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। যদিও এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়নি। আর ভবনটি বিজ্ঞানের জন্য তৈরি হলেও এই কলেজে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী খুবই কম। কলেজটিতে উচ্চমাধ্যমিক ও ডিগ্রি পাস কোর্সে পড়ানো হয়। এর মধ্যে একাদশ শ্রেণিতে মোট ৩৯৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থী ২৭ জন। বাকিদের মধ্যে ২৯৬ জন মানবিকের ও ৭২ জন ব্যবসায় শিক্ষা শাখার। আর দ্বাদশ শ্রেণিতে ৪৫৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৭ জন বিজ্ঞানের। বাকিরা মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক জানান, এই কলেজে মূলত এলাকার ‘দুর্বল’ শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়। ফলে ফলও খুব ভালো হয় না। যেমন গত বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৪৮ শতাংশের কিছু বেশি।

আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সাল থেকে গত মার্চ পর্যন্ত মোট ৯৫টির মধ্যে ১৫টি প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ হয়েছে। আর ১৮টির মধ্যে ৫টি ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ এবং ৬টির মধ্যে ৫টির মেরামত ও সংস্কারকাজ শেষ হয়েছে। আর ৪৭টি হোস্টেলের মধ্যে ৩৫টির কাজ চলমান।

প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, কোনো কোনো কলেজে কাজের অগ্রগতি ভালো হলেও কোনো কলেজের কাজের অগ্রগতি খুবই কম। যেমন চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজে গত মার্চ পর্যন্ত বাস্তব অগ্রগতি মাত্র ৫ শতাংশ।