নির্বাচন ভাবনা থেকে নয়, অর্থনীতির প্রয়োজনে অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের তাগিদ
- আপডেট সময় : ০৯:২৭:৪৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ অক্টোবর ২০২৩ ৬৭ বার পড়া হয়েছে
নির্বাচন ভাবনা থেকে নয়, অর্থনীতির প্রয়োজনের নিরিখে অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত দ্রুততার সঙ্গে গ্রহণের তাগিদ দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক সুশাসন খুবই জরুরি। এ জন্য খেলাপি ঋণ কমানো, ব্যাংক খাতের সংস্কার, অর্থ পাচার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণসহ বেশ কিছু সুপারিশ করেছে সিপিডি।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সিপিডির পক্ষ থেকে সংস্থাটির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান ও নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন এসব সুপারিশ তুলে ধরেন। এ সময় তাঁরা দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ব্যাংকের সুদের হার ও ডলারের বিনিময় মূল্য বাজারভিত্তিক করার পরামর্শ দেন। বাংলাদেশ ব্যাংককে তাঁরা বলেছেন, সুদের হার বাড়ানো হলে তা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে। আর ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করা হলে তার সুফল মিলবে প্রবাসী আয়ে।
দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে সরকারের পক্ষ থেকে অর্থনীতিবিদ, গবেষক, সাবেক গভর্নরসহ অর্থনীতিবিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার মোস্তাফিজুর রহমান ও ফাহমিদা খাতুনকে বাংলাদেশ ব্যাংকে ডাকা হয়।
এই দুজনের সঙ্গে বৈঠকে সরকারের পক্ষে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, চার ডেপুটি গভর্নরসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে অর্থনীতির নানা সূচক, নীতি উদ্যোগ ও তার প্রভাব নিয়ে একটি উপস্থাপনা দেন প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান। সংকট কাটাতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, উপস্থাপনায় সেগুলো তুলে ধরা হয়। তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি সংকটে পড়েছে কেবল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে নয়। বরং এর জন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ছয়টি কারণও দায়ী। এই ছয় কারণ হচ্ছে আবহাওয়াজনিত প্রতিবন্ধকতা (অতিমাত্রায় তাপপ্রবাহ, অতিবৃষ্টি, অপ্রত্যাশিত বন্যা), অনৈতিক ব্যবসা (সিন্ডিকেট, মজুতদারি, মূল্য ঠিক করা, কৃত্রিমভাবে ঘাটতি দেখানো ইত্যাদি), দুর্বল করপোরেট পরিচালনা, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি সংস্কৃতি, জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো এবং ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিং (আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে শুল্ক ফাঁকি ও অর্থ পাচার)। পাশাপাশি বহির্বিশ্বের তিনটি কারণও উল্লেখ করা হয়। সেগুলো হলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক পণ্য সরবরাহের ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়া; পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়া; জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণের মূল্যবৃদ্ধি।
বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে মোস্তাফিজুর রহমান রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সভায় আমরা বলেছি, অর্থনীতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে অর্থনৈতিক প্রয়োজনের নিরিখে এবং সিদ্ধান্তগুলো নিতে হবে দ্রুত। সামনে নির্বাচন, এটাকে মাথায় রেখে অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলে তাতে পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কার কথা আমরা জানিয়েছি।’
মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি এখন তাদের জন্য বড় উদ্বেগের বিষয়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এরই মধ্যে তারা নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আমরা বলেছি, যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, সেগুলোর পাশাপাশি আরও দ্রুততার সঙ্গে কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে। সুদের হার ও ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করতে হবে।’
সভায় উপস্থিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই অর্থনীতিবিদ আমাদের নেওয়া নানা পদক্ষেপের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া নীতি উদ্যোগ ও এর প্রভাব সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। নতুন করে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন।’ সিপিডির অর্থনীতিবিদেরা ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ কমাতে কঠোর হওয়ার তাগিদ দেন জানিয়ে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, তাঁরা ব্যাংকগুলোয় সুশাসন নিশ্চিতের তাগিদ দেন। ব্যাংক খাত ঠিক করতে বাংলাদেশ ব্যাংক যেন যথাযথ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে, তা নিশ্চিতের কথাও বলেন।
এর আগে গত সপ্তাহে ঋণ কমিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি নীতি সুদহার বাড়িয়ে বাজার থেকে টাকা তুলে নেওয়ার পরামর্শ দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি কমাতে ‘সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতি’ গ্রহণ এবং খরচ কমাতে সরকারকে পরামর্শ দেন তিনি।