ঢাকা ১১:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি ::
আমাদের নিউজপোর্টালে আপনাকে স্বাগতম... সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে...

ফেনীর বন্যা পরিস্থিতি অত্যান্ত ভয়াবহ

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৩:১৬:৫৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৪ ১৭৬ বার পড়া হয়েছে

ফেনী থেকে ফেরার পথেঃ-

ফেনীর অবস্থা ভয়াবহ। ধারণার চেয়েও বেশি। ফেনী সদর (শহর না, সদরের অন্যান্য গ্রাম যেমন – মোটবি, শাহাপুর, কাজিরবাধ ইত্যাদি) ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়ার গ্রামের পর গ্রাম পানির নিচে ডুবে আছে। কিছু লম্বা গাছ, আর দোতলা বাড়ির চূড়া ছাড়া কিছু দেখা যায় না। কালকে রাত থেকে পানি কিছুটা নামা শুরু হয়েছে। কিন্তু, পানি নেমে কই যাবে? ডাউন স্ট্রিমে অর্থাৎ এরপরই সোনাহাজী, দাগনভূঞা প্লাবিত হবার সম্ভাবনা প্রবল। নোয়াখালীতেও প্রবাহ বাড়বে। যদিও এসব অঞ্চলে ইতোমধ্যে পানি প্রত্যেক বাড়ির উঠোনে। হয়ত আজ রাতেই ঘরের মধ্যে পানি ঢুকবে।

ফেনীতে যথেষ্ট ভলান্টিয়ার আছে। কিন্তু তার তুলনায় ইকুয়েপমেন্ট খু্বই কম। ইকুয়েপেমেন্টের অভাবেই আমি ঢাকার পথ ধরলাম। গতকাল থেকে এখন অবধি সর্বোচ্চ ৪০ টা বোট ঢুকসে। ভলান্টিয়ার আছে কমপক্ষে ৫০০ জন। বোটে চড়ে ভলান্টিয়াররাই যদি প্লাবন এলাকায় যায়, দুর্গতদের রেসকিউ করবে কীসে? অতিদ্রুত বোট এবং খাবার বাড়াইতে হবে। সোনাগাজী এবং দাগনভূঞার মানুশদের এখুনই অন্যত্র সরাইতে পারলে ক্ষয়ক্ষতি কিছুটা কমবে।

আমি জানি না, ভারতের পানি জল্লাদে আমরা কতজন মানুশকে হারাবো। ধারণা করি সংখ্যাটা নেহায়েত কম হবে না। আর্থিক ক্ষয়ক্ষতিতে বহু স্বচ্ছল পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাবে। ফসলের মাঠ উজাড় হয়ে যাচ্ছে। আগামী এক বছরের মজুদ খাদ্যদ্রব্য ভেসে যাচ্ছে। হাঁস-মুরগি, পশুপাখি কোনোকিছুই অবশিষ্ট নাই।

ছাত্র-জনতার অভিপ্রায়ে নির্বাচিত অন্তর্বতীকালীন সরকারকে ফেনী-কুমিল্লা-নোয়াখালী বন্যার প্রকোপ মোকাবেলায় ভিন্ন একটা কমিশন গঠন করা প্রয়োজন। সর্বশক্তি নিয়ে অতিদ্রুত নামতে হবে। BIWTA ২০-২৫ টা বোট সরবরাহ করসে। আরো বোট লাগবে। স্থানীয় প্রশাসন একরকমের হেঁয়ালি করতেসে। সকাল ৮ টায় ছিলো পুলিশের রিপোর্টিং টাইম, এসপি সাহেবের সাথে ছাত্র নেতাদের মিটিং। এসপি সাহেব আসলেন না, ৮:৩০ টার পরে আমি, হামজা, কাদের ব্যারাকে গিয়ে রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে পুলিশকে আনলাম। এসব ত্রুটি দূর করে ফেলতে হবে। বন্যার পানি নেমে যাওয়াই বন্যা শেষ না। এই দুর্যোগের দুর্ভোগ টানতে হবে কমপক্ষে কয়েক বছর। ছাত্র-জনতা বন্যা কমিশন গঠন করে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল সহ আরো যেসব জায়গায় বন্যা হয়েছে সেসব মানুশের ঘুরে দাঁড়ানো অবধি কাজ করতে হবে। কমিশনের সময়সীমা পরিস্থিতি বুঝে নির্ধারিত হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বন্যাকে শুধু পানি নামা দিয়েই শেষ করা উচিত হবে না। সরকারের যদি লিয়াজো করে তাদেরও কাজ করে যেতে হবে। ফেনীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের টিমটার ম্যানেজমেন্ট খুবই নাজেহাল। স্থানীয় মানুশজন রীতিমতো ক্ষিপ্ত, তাদের প্রত্যাশার কিছুই পূরণ হচ্ছে না। বন্যা প্রতিরোধের জন্য একটা উপ-কমিটি করে সরকারের সঙ্গে মিলে কাজ করতে পারাটাই ভালো। সিনিয়র কয়েকজন নেতৃবৃন্দের উপর দায়িত্বের ভার অর্পণ করতে হবে। আখতার ভাই-আকরাম ভাই লেভেলের নেতাদের ছাড়া হবে না। জুনিয়রদের দিয়ে চলবে না। DUSAF (Dhaka University Students Association of Feni) র নেতারা এক্টিভ। তাদেরকেও সাথে নেয়া প্রয়োজন লোকাল হিসেবে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেনীর ছাত্রদের সাথেও কোলাবোরেশান করা যায়৷ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ অনেকেই এই পোস্ট দেখবেন, আপনারা বিষয়গুলো নিয়ে আপনাদের ফোরামে আলোচনা করুন।

মানুশজন তো নানাভাবে সাহায্য করবেই। তার বাইরে অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতা এবং সরকারকে সেন্ট্রালি বড় দায়িত্বটা নিতে হবে।

যারা ফেনীতে আসতে চান বা ফেনী থেকে ঢাকায় যেতে চান, তারা চৌমুহনীর পথটা ব্যবহার করেন। তেমন জ্যাম নাই, নিরাপদও আছে। আশু প্রয়োজন দক্ষ পরিকল্পনা, এবং সে অনুযায়ী কাজ৷ উটকো ঝামেলা বাড়ানো যাবে না। মানুশজন তাদের সর্বস্ব দিয়ে যেভাবে ফান্ড রেইজ করতেসে, পরিকল্পনাুযায়ী কাজ না হলে সব জলে যাবে।

আল্লাহ আমাদের সহায় হোন!
জাহিদ হাসান

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

ফেনীর বন্যা পরিস্থিতি অত্যান্ত ভয়াবহ

আপডেট সময় : ০৩:১৬:৫৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৪

ফেনী থেকে ফেরার পথেঃ-

ফেনীর অবস্থা ভয়াবহ। ধারণার চেয়েও বেশি। ফেনী সদর (শহর না, সদরের অন্যান্য গ্রাম যেমন – মোটবি, শাহাপুর, কাজিরবাধ ইত্যাদি) ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়ার গ্রামের পর গ্রাম পানির নিচে ডুবে আছে। কিছু লম্বা গাছ, আর দোতলা বাড়ির চূড়া ছাড়া কিছু দেখা যায় না। কালকে রাত থেকে পানি কিছুটা নামা শুরু হয়েছে। কিন্তু, পানি নেমে কই যাবে? ডাউন স্ট্রিমে অর্থাৎ এরপরই সোনাহাজী, দাগনভূঞা প্লাবিত হবার সম্ভাবনা প্রবল। নোয়াখালীতেও প্রবাহ বাড়বে। যদিও এসব অঞ্চলে ইতোমধ্যে পানি প্রত্যেক বাড়ির উঠোনে। হয়ত আজ রাতেই ঘরের মধ্যে পানি ঢুকবে।

ফেনীতে যথেষ্ট ভলান্টিয়ার আছে। কিন্তু তার তুলনায় ইকুয়েপমেন্ট খু্বই কম। ইকুয়েপেমেন্টের অভাবেই আমি ঢাকার পথ ধরলাম। গতকাল থেকে এখন অবধি সর্বোচ্চ ৪০ টা বোট ঢুকসে। ভলান্টিয়ার আছে কমপক্ষে ৫০০ জন। বোটে চড়ে ভলান্টিয়াররাই যদি প্লাবন এলাকায় যায়, দুর্গতদের রেসকিউ করবে কীসে? অতিদ্রুত বোট এবং খাবার বাড়াইতে হবে। সোনাগাজী এবং দাগনভূঞার মানুশদের এখুনই অন্যত্র সরাইতে পারলে ক্ষয়ক্ষতি কিছুটা কমবে।

আমি জানি না, ভারতের পানি জল্লাদে আমরা কতজন মানুশকে হারাবো। ধারণা করি সংখ্যাটা নেহায়েত কম হবে না। আর্থিক ক্ষয়ক্ষতিতে বহু স্বচ্ছল পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাবে। ফসলের মাঠ উজাড় হয়ে যাচ্ছে। আগামী এক বছরের মজুদ খাদ্যদ্রব্য ভেসে যাচ্ছে। হাঁস-মুরগি, পশুপাখি কোনোকিছুই অবশিষ্ট নাই।

ছাত্র-জনতার অভিপ্রায়ে নির্বাচিত অন্তর্বতীকালীন সরকারকে ফেনী-কুমিল্লা-নোয়াখালী বন্যার প্রকোপ মোকাবেলায় ভিন্ন একটা কমিশন গঠন করা প্রয়োজন। সর্বশক্তি নিয়ে অতিদ্রুত নামতে হবে। BIWTA ২০-২৫ টা বোট সরবরাহ করসে। আরো বোট লাগবে। স্থানীয় প্রশাসন একরকমের হেঁয়ালি করতেসে। সকাল ৮ টায় ছিলো পুলিশের রিপোর্টিং টাইম, এসপি সাহেবের সাথে ছাত্র নেতাদের মিটিং। এসপি সাহেব আসলেন না, ৮:৩০ টার পরে আমি, হামজা, কাদের ব্যারাকে গিয়ে রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে পুলিশকে আনলাম। এসব ত্রুটি দূর করে ফেলতে হবে। বন্যার পানি নেমে যাওয়াই বন্যা শেষ না। এই দুর্যোগের দুর্ভোগ টানতে হবে কমপক্ষে কয়েক বছর। ছাত্র-জনতা বন্যা কমিশন গঠন করে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল সহ আরো যেসব জায়গায় বন্যা হয়েছে সেসব মানুশের ঘুরে দাঁড়ানো অবধি কাজ করতে হবে। কমিশনের সময়সীমা পরিস্থিতি বুঝে নির্ধারিত হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বন্যাকে শুধু পানি নামা দিয়েই শেষ করা উচিত হবে না। সরকারের যদি লিয়াজো করে তাদেরও কাজ করে যেতে হবে। ফেনীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের টিমটার ম্যানেজমেন্ট খুবই নাজেহাল। স্থানীয় মানুশজন রীতিমতো ক্ষিপ্ত, তাদের প্রত্যাশার কিছুই পূরণ হচ্ছে না। বন্যা প্রতিরোধের জন্য একটা উপ-কমিটি করে সরকারের সঙ্গে মিলে কাজ করতে পারাটাই ভালো। সিনিয়র কয়েকজন নেতৃবৃন্দের উপর দায়িত্বের ভার অর্পণ করতে হবে। আখতার ভাই-আকরাম ভাই লেভেলের নেতাদের ছাড়া হবে না। জুনিয়রদের দিয়ে চলবে না। DUSAF (Dhaka University Students Association of Feni) র নেতারা এক্টিভ। তাদেরকেও সাথে নেয়া প্রয়োজন লোকাল হিসেবে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেনীর ছাত্রদের সাথেও কোলাবোরেশান করা যায়৷ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ অনেকেই এই পোস্ট দেখবেন, আপনারা বিষয়গুলো নিয়ে আপনাদের ফোরামে আলোচনা করুন।

মানুশজন তো নানাভাবে সাহায্য করবেই। তার বাইরে অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতা এবং সরকারকে সেন্ট্রালি বড় দায়িত্বটা নিতে হবে।

যারা ফেনীতে আসতে চান বা ফেনী থেকে ঢাকায় যেতে চান, তারা চৌমুহনীর পথটা ব্যবহার করেন। তেমন জ্যাম নাই, নিরাপদও আছে। আশু প্রয়োজন দক্ষ পরিকল্পনা, এবং সে অনুযায়ী কাজ৷ উটকো ঝামেলা বাড়ানো যাবে না। মানুশজন তাদের সর্বস্ব দিয়ে যেভাবে ফান্ড রেইজ করতেসে, পরিকল্পনাুযায়ী কাজ না হলে সব জলে যাবে।

আল্লাহ আমাদের সহায় হোন!
জাহিদ হাসান