সেতুটি ছিনতাইকারীদের ‘অভয়ারণ্য’

- আপডেট সময় : ০৬:৫৩:৫৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২৭ বার পড়া হয়েছে
গাজীপুরের শ্রীপুর ও কাপাসিয়া উপজেলাকে যুক্ত করা সেতুটির কাছেই রয়েছে পুলিশের ফাঁড়ি। এরপরও সেখানে প্রায়ই ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা।
গাজীপুরের শ্রীপুর ও কাপাসিয়াকে আলাদা করেছে বানার নদ। উপজেলা দুটিকে যুক্ত করেছে অ্যাডভোকেট রহমত আলী সেতু। সেতুর এক প্রান্তে শ্রীপুরের বরামা, অন্য প্রান্তে কাপাসিয়ার সিংহশ্রী এলাকা। দিনের বেলায় সবকিছু স্বাভাবিক থাকলেও রাতের বেলায় সেতুটি হয়ে ওঠে ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্য। সেতুতে প্রায়ই ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। ছিনতাইয়ের জন্য গাড়ি থামাতে পুলিশের মতো ব্যবহার করা হয় লেজার লাইট।
শ্রীপুরের মাওনা এলাকায় দোকানে চাকরি করেন তন্ময় আহমেদ নামের এক ব্যক্তি। তাঁর বাড়ি কাপাসিয়ার টোক এলাকায়। সম্প্রতি রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি ওই সেতুতে ছিনতাইয়ের শিকার হন। খুইয়েছেন মোটরসাইকেল, টাকাসহ মানিব্যাগ ও স্মার্টফোন।
তন্ময় আহমেদ জানায়, প্রতিদিন রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে ওই সেতু হয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি। ১০ সেপ্টেম্বর তাঁর ফিরতে দেরি হয়। মাওনা থেকে শ্রীপুর হয়ে রাত সাড়ে ১২টায় মোটরসাইকেলে করে ওই সেতুতে ওঠেন তিনি।
সেতুর মাঝামাঝি পৌঁছার পর সবুজ রঙের লেজার লাইটের ইশারায় তাঁকে থামার সংকেত দেওয়া হয়। পুলিশের সংকেত ভেবে তিনি মোটরসাইকেল থামান। মোটরসাইকেল থামিয়ে বুঝতে পারেন তাঁরা পুলিশ নন। এর মধ্যে পাঁচ-ছয়জনের দলটি তাঁর (তন্ময়) কাছে এগিয়ে এসে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে মানিব্যাগসহ টাকা ও মুঠোফোন কেড়ে নেয়। এরপর তাঁকে মারধর করে মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়।
এর আগে ৩০ আগস্ট দিবাগত রাত ২টায় নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে ঢাকা থেকে শ্রীপুর হয়ে কাপাসিয়া ফিরছিলেন মোমেন খান নামের এক ব্যক্তি। বরামা এলাকার অ্যাডভোকেট রহমত আলী সেতুতে প্রবেশের মুখে লেজার লাইটের সংকেত দিয়ে তাঁর গাড়ি থামায় চার–পাঁচজনের একটি দল। পুলিশের সংকেত ভেবে তিনি গাড়ি থামিয়ে ভেতর থেকে বেরিয়ে আসেন। এরপর মাথায় গামছা ও কাপড়ে মুখ ঢাকা ছিনতাইকারীরা তাঁর শরীরে পিস্তল ঠেকিয়ে মুঠোফোন, মানিব্যাগ ও সঙ্গে থাকা ৬৫ হাজার টাকা ছিনতাই করে পালিয়ে যায় তারা।
চলতি বছর এমন ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন আরও কয়েকজন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সেতু থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরত্বে সিংহশ্রী পুলিশ ফাঁড়ির অবস্থান। এরপরেও ওই সেতুতে প্রায়ই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। ভয়ে রাত নয়টার পর সেতু পারাপার করতে চায় না মানুষ।
শ্রীপুরের বরামা এলাকার রবিউল ইসলাম বলেন, বরামা থেকে সেতু হয়ে সিংহশ্রী পর্যন্ত সড়কটি পুরো নির্জন। সন্ধ্যার পর সেখানে কোনো বাতি জ্বলে না। অন্ধকারে ঢেকে থাকে বরামা সেতুটি। ফলে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেতু এলাকা অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়। প্রায়ই ছিনতাই ও ডাকাতির মতো ঘটনা ঘটে। বরমী কায়েতপাড়া গ্রামের আল আমিন বলেন, রাত নয়টার পর সেতুটি ভয়ংকর হয়ে ওঠে। সেখানে বখাটে ও ছিনতাইকারীদের উৎপাত বেড়ে যায়। রাতে ওই সেতুতে একা মোটরসাইকেল বা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে চলাচলে মারাত্মক ঝুঁকি থাকে।
সেতুটির অদূরে অবস্থিত সিংহশ্রী পুলিশ ফাঁড়ির দাপ্তরিক মুঠোফোন নম্বরে বারবার ফোন দিলেও কেউ ধরেননি। যোগাযোগ করা হলে কাপাসিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এইচ এম লুৎফুল কবির বলেন, ‘আমাদের টহল পুলিশ রয়েছে। এ ধরনের ছিনতাইয়ের কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
শ্রীপুর থানার ওসি এএফএম নাসিম বলেন, ‘ছিনতাইয়ের ঘটনার একটি মেসেজ পেয়েছি। কোনো অভিযোগ পাইনি। সেতুটি দুই উপজেলার সংযোগস্থল। এখন থেকে সেখানে আমরা টহল পুলিশ পাঠাব।’