ডেঙ্গু মশা বৃষ্টিতে কি প্রভাব সৃষ্টি করে
- আপডেট সময় : ১১:৫০:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর ২০২৪ ৮২ বার পড়া হয়েছে
অতি ভারী বৃষ্টিপাত মশার লার্ভাকে প্রজনন স্থান থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে বা মেরে ফেলতে পারে। আবার হালকা বৃষ্টি বিদ্যমান প্রজনন স্থানগুলো পুনরায় পূরণ করতে পারে
গত দুবছর থেকে দেখা যাচ্ছে ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ অতি উচ্চ। ডেঙ্গুতে এত মানুষের মৃত্যুর কারণ জানার জন্য গবেষণার বিকল্প নেই। বাংলাদেশে যারা এ বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা করেন তাদের সঙ্গে সরকারের সমন্বয় সাধন প্রয়োজন। রাষ্ট্রের উচিত গবেষকদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে গবেষণায় উৎসাহিত করা।
ডেঙ্গু ভাইরাসের সংক্রমণ বিভিন্ন কারণে জলবায়ু সংবেদনশীল। প্রথমত, তাপমাত্রার পরিবর্তন ভেক্টরের প্রজনন হার, কামড়ের হার, ভাইরাসের ইনকিউবেশনের সময় পরিবর্তন, ভেক্টরের ভৌগোলিক পরিসর বা বিস্তার পরিবর্তন করে এবং ভেক্টর-ভাইরাস-হোস্ট সম্পর্ক বৃদ্ধি বা হ্রাস করে ভেক্টরবাহিত রোগ সংক্রমণ এবং মহামারি সম্ভাব্যতাকে প্রভাবিত করে।
দ্বিতীয়ত, বৃষ্টিপাত প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী মশার ঘনত্বকে প্রভাবিত করে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রজনন স্থানের বৃদ্ধি ঘটায় যার ফলে মশার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী মশার সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে এটি সহজেই ভাইরাস প্রাপ্ত হওয়া এবং সংক্রমণ ছড়িয়ে দেওয়ার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তোলে।
তৃতীয়ত, ডেঙ্গু হেমোরেজিক প্রাদুর্ভাবের একটি স্বতন্ত্র মৌসুমি প্যাটার্ন পৃথিবীর বেশিরভাগ জায়গায় স্পষ্ট। গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের দেশগুলো যেখানে দীর্ঘসময় বর্ষাকাল থাকে সেখানে বর্ষাকালে ডেঙ্গু রোগ বৃদ্ধি পায় এবং বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার কয়েক মাস পরে কমে আসে। বৃষ্টি বা বর্ষার সঙ্গে ডেঙ্গুর বাহক মশার প্রজনন হার বা দীর্ঘায়ু হ্রাস অথবা তার কামড়ানোর ক্ষমতার পরিবর্তিত হতে পারে। তবে বাংলাদেশে ডেঙ্গু যে শুধুমাত্র বৃষ্টিপাতের ওপরই নির্ভর করে তা নয়।
বাংলাদেশের নগরে বিভিন্ন স্থানে পানি সংকট থাকার কারণে জনগণ তার বাথরুমে অথবা টয়লেটে পানি জমিয়ে রাখে। এছাড়া শীতকালে বাংলাদেশে নির্মাণ কাজ বেড়ে যাওয়ায় নির্মাণাধীন ভবনে পানির ব্যবহার ডেঙ্গুর বাহক মশার প্রজননকে বাড়িয়ে তোলে। যেহেতু মশার ডিম, লার্ভা এবং পিউপা বেড়ে ওঠার জন্য পানি প্রয়োজন তাই পানি, বৃষ্টি বা বর্ষা মশার প্রজননের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বর্ষাকালে বাংলাদেশ ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি হলেও শীতকালেও এখন মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। মশার জীবনচক্র তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতার উপরে অনেকটা নির্ভরশীল। বর্ষাকালে যেহেতু তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা উপযোগী থাকে তাই এই সময়ে মশার প্রজনন এবং বেঁচে থাকা খুব সহমশার ঘনত্বের ইনডেক্স যেটিকে ‘ব্রুটো ইনডেক্স’ বলা হয় সেটি যখন কোনো একটি এলাকায় ২০ বা তার অধিক হয় তখন ধরে না হয় সে অঞ্চলে এডিস মশাবাহিত রোগ যেমন ডেঙ্গু চিকুনগুনিয়া ইত্যাদি বেড়ে যেতে পারে। এই মুহূর্তে ঢাকার প্রতিটি মহল্লায় ব্রুটো ইনডেক্স বিষয়ের ওপরে রয়েছে। তাই পুরো শহরই ডেঙ্গু ঝুঁকিতে।
তবে কোনো কোনো স্থানে সেই ইনডেক্স ৭০ এর বেশি আছে। এছাড়া কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, বরিশাল, বরগুনা, পিরোজপুর, খুলনা, নরসিংদী, চাঁদপুর এবং ময়মনসিংহে এডিস মশার ঘনত্ব বেশি রয়েছে। কোনো একটি স্থানে এডিস মশার ঘনত্ব যদি বেশি থাকে এবং সেই অঞ্চলে যদি রোগী থাকে তাহলে সেখানে জ্যামিতিক হারে ডেঙ্গু রোগটি বাড়তে থাকে।
যদি কোথাও অনেক এডিস মশা থাকে কিন্তু কোনো রোগী না থাকে তাহলে সেখানে রোগটি ছড়াবে না আবার কোনো একটি জায়গাতে যদি অনেক রোগী থাকে কিন্তু এডিস মশা না থাকে তাহলেও রোগটি ছড়াবে না। ডেঙ্গু রোগী এবং এডিস মশার সঙ্গে সম্পর্কটি ভেঙে দিতে পারলে ডেঙ্গুকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এই সম্পর্ক ভেঙে দেওয়ার কয়েকটি উপায় রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে উত্তম পন্থা হলো ডেঙ্গু রোগীকে সবসময় মশারির ভেতরে রাখা। প্রতিরোধ ব্যবস্থার মধ্যে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এডিস মশাকে নিয়ন্ত্রণ করা।
যদি প্রজনন স্থলগুলো এমন হয় যে একে ফেলে দেওয়া যাচ্ছে না তাহলে সেখানে কর্পোরেশনের মাধ্যমে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। আমরা দীর্ঘ সময় ধরে বলে এসেছি মশা মারার এরোসল এবং কয়েলের মতো করে মশার লার্ভা মারার কীটনাশক মানুষের হাতের নাগালে আসা প্রয়োজন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এবিএম আবদুল্লাহ বলছেন, এখন যেহেতু ডেঙ্গুর সময়, সেজন্য জ্বর হল অবহেলা করা উচিত নয়।
জ্বরে আক্রান্ত হলেই সাথে-সাথে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ।
তিনি বলছেন, ”ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন, তারা জ্বরকে অবহেলা করেছেন। জ্বরের সাথে যদি সর্দি- কাশি, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া কিংবা অন্য কোন বিষয় জড়িত থাকে তাহলে সেটি ডেঙ্গু না হয়ে অন্যকিছু হতে পারে। তবে জ্বর হলেই সচেতন থাকতে হবে।”