ঢাকা ০৬:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৫ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞপ্তি ::
আমাদের নিউজপোর্টালে আপনাকে স্বাগতম... সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে...

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী-বিরোধী বিক্ষোভ, কঙ্গোতে নিহত অন্তত ৪৩

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৬:১৭:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০ বার পড়া হয়েছে

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, কঙ্গোর একজন পুলিশ কর্মকর্তার ওপর হামলার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর কঙ্গোয় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশন এবং অন্যান্য বিদেশি সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। যদিও ওই ভিডিও যাচাই করে দেখতে পারেনি রয়টার্স।

এরপর কঙ্গোর সেনাবাহিনী জোর করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করলে সহিংসতা শুরু হয়। বুধবার এই ঘটনা ঘটে।

সরকারি একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই ঘটনায় অন্তত ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে আর অন্তত ৫৬ জন আহত হয়েছে। সহিংসতার ঘটনায় ১৫৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সেনাবাহিনী।

জেনিভায় একটি সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি বলেছেন, ‘’পুলিশের একজন কর্মকর্তাসহ ৪৩ জন নিহত হওয়ার ঘটনা আর ৫৬ জন আহত হওয়ার খবরে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি।‘’

তিনি আভাস দেন, হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে তারা খবর পাচ্ছেন।

রয়টার্স জানিয়েছে, সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ট্রাকের ভেতরে মৃতদেহ স্তূপ করে রাখছে সেনা সদস্যরা। পরে কনভয় বা সেনাবাহিনীর গাড়ি বহরের সঙ্গে সেই ট্রাক নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যদিও এই ভিডিও সত্যতা যাচাই করে দেখা সম্ভব হয়নি।

আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের গোমা শাখার প্রধান অ্যানে-সিলভি লিন্ডার বলেছেন, বিক্ষোভের ঘটনার পর থেকে তার ক্লিনিকে ছুরিকাঘাত এবং গুলির ক্ষত নিয়ে অসংখ্য মানুষ চিকিৎসা নিতে এসেছে।

মনুসকো নামে পরিচিত কঙ্গোয় নিয়োজিত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী একটি বিবৃতিতে তাদের শোক প্রকাশ করেছে। সহিংসতার ঘটনায় তারা সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বলেও জানিয়েছে।

সেখানে বলা হয়েছে, ‘’কঙ্গোর কর্তৃপক্ষের প্রতি আমরা আহবান জানাচ্ছি যেন তারা এই ঘটনার দ্রুত তদন্ত এবং নিরপেক্ষ তদন্ত করে। যাদের আটক করা হয়েছে, তাদের সাথে মানবিক ব্যবহার এবং তাদের অধিকারের প্রতি সম্মান জানানোর জন্যও অনুরোধ করছি।‘’

দশকের পর দশক ধরে চলা মিলিশিয়া বাহিনীর সহিংসতা থেকে বেসামরিক মানুষজনকে নিরাপত্তা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরা ব্যর্থ হয়েছে, এমন অভিযোগে গত বছর থেকে তাদের বিরুদ্ধে প্রথম বিক্ষোভ শুরু হয়।

গত বছরের জুলাই মাসের ওই বিক্ষোভে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল যাদের মধ্যে তিনজন শান্তিরক্ষীও নিহত হয়েছিলেন। সেই সময় গোমা এবং বুতেমবো শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল।

গত জুলাই মাসেই মালির সরকারের দাবিতে সেদেশ থেকে শান্তিরক্ষা মিশন বন্ধ করে দেয় জাতিসংঘ।

কঙ্গোয় জাতিসংঘের এই মিশনের নাম ইউনাইটেড ন্যাশন্স অর্গানাইজেশন স্ট্যাবিলাইজেশন মিশন ইন দ্যা ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব দি কঙ্গো বা মনুসকো।

গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশটিতে প্রথম এই শান্তিরক্ষা মিশনের যাত্রা শুরু হয় ২০১০ সালের পহেলা জুলাই থেকে। তাদের মূল দায়িত্ব বেসামরিক নাগরিকের সুরক্ষা দেয়া, মানবাধিকার কর্মীদের যেকোনো সহিংসতা থেকে রক্ষা করা এবং শান্তি রক্ষায় কঙ্গোর সরকারকে সহায়তা করা।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযাী, গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এই শান্তিরক্ষা মিশনে মোট ১৭ হাজার ৭৫৩ জন সদস্য রয়েছে। তাদের মধ্যে সৈন্য রয়েছে ১২ হাজার ৩৭৯ জন আর পুলিশ রয়েছে ১ হাজার ৫৯৭ জন। তাদের বাকিদের মধ্যে আছে মিশনের নানা বিষয়ের বিশেষজ্ঞ, সামরিক পর্যবেক্ষক, বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং বেসামরিক সদস্যরা।

সৈন্যবাহিনীতে তৃতীয় সর্বোচ্চ সৈনিক রয়েছে বাংলাদেশের, এক হাজার ৬৪০ হন। তবে সৈন্য সংখ্যার দিক থেকে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে ভারতও পাকিস্তান, যথাক্রমে ১, ৮৩৪ জন আর ১, ৭৬৭ জন।

পুলিশের সংখ্যার দিক থেকেও সেনেগাল আর মিশরের পরেই রয়েছে বাংলাদেশের পুলিশের অবস্থান। কঙ্গোয় গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বাংলাদেশের ২১১ জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিলেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী-বিরোধী বিক্ষোভ, কঙ্গোতে নিহত অন্তত ৪৩

আপডেট সময় : ০৬:১৭:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, কঙ্গোর একজন পুলিশ কর্মকর্তার ওপর হামলার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর কঙ্গোয় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশন এবং অন্যান্য বিদেশি সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। যদিও ওই ভিডিও যাচাই করে দেখতে পারেনি রয়টার্স।

এরপর কঙ্গোর সেনাবাহিনী জোর করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করলে সহিংসতা শুরু হয়। বুধবার এই ঘটনা ঘটে।

সরকারি একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই ঘটনায় অন্তত ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে আর অন্তত ৫৬ জন আহত হয়েছে। সহিংসতার ঘটনায় ১৫৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সেনাবাহিনী।

জেনিভায় একটি সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি বলেছেন, ‘’পুলিশের একজন কর্মকর্তাসহ ৪৩ জন নিহত হওয়ার ঘটনা আর ৫৬ জন আহত হওয়ার খবরে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি।‘’

তিনি আভাস দেন, হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে তারা খবর পাচ্ছেন।

রয়টার্স জানিয়েছে, সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ট্রাকের ভেতরে মৃতদেহ স্তূপ করে রাখছে সেনা সদস্যরা। পরে কনভয় বা সেনাবাহিনীর গাড়ি বহরের সঙ্গে সেই ট্রাক নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যদিও এই ভিডিও সত্যতা যাচাই করে দেখা সম্ভব হয়নি।

আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের গোমা শাখার প্রধান অ্যানে-সিলভি লিন্ডার বলেছেন, বিক্ষোভের ঘটনার পর থেকে তার ক্লিনিকে ছুরিকাঘাত এবং গুলির ক্ষত নিয়ে অসংখ্য মানুষ চিকিৎসা নিতে এসেছে।

মনুসকো নামে পরিচিত কঙ্গোয় নিয়োজিত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী একটি বিবৃতিতে তাদের শোক প্রকাশ করেছে। সহিংসতার ঘটনায় তারা সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বলেও জানিয়েছে।

সেখানে বলা হয়েছে, ‘’কঙ্গোর কর্তৃপক্ষের প্রতি আমরা আহবান জানাচ্ছি যেন তারা এই ঘটনার দ্রুত তদন্ত এবং নিরপেক্ষ তদন্ত করে। যাদের আটক করা হয়েছে, তাদের সাথে মানবিক ব্যবহার এবং তাদের অধিকারের প্রতি সম্মান জানানোর জন্যও অনুরোধ করছি।‘’

দশকের পর দশক ধরে চলা মিলিশিয়া বাহিনীর সহিংসতা থেকে বেসামরিক মানুষজনকে নিরাপত্তা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরা ব্যর্থ হয়েছে, এমন অভিযোগে গত বছর থেকে তাদের বিরুদ্ধে প্রথম বিক্ষোভ শুরু হয়।

গত বছরের জুলাই মাসের ওই বিক্ষোভে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল যাদের মধ্যে তিনজন শান্তিরক্ষীও নিহত হয়েছিলেন। সেই সময় গোমা এবং বুতেমবো শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল।

গত জুলাই মাসেই মালির সরকারের দাবিতে সেদেশ থেকে শান্তিরক্ষা মিশন বন্ধ করে দেয় জাতিসংঘ।

কঙ্গোয় জাতিসংঘের এই মিশনের নাম ইউনাইটেড ন্যাশন্স অর্গানাইজেশন স্ট্যাবিলাইজেশন মিশন ইন দ্যা ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব দি কঙ্গো বা মনুসকো।

গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশটিতে প্রথম এই শান্তিরক্ষা মিশনের যাত্রা শুরু হয় ২০১০ সালের পহেলা জুলাই থেকে। তাদের মূল দায়িত্ব বেসামরিক নাগরিকের সুরক্ষা দেয়া, মানবাধিকার কর্মীদের যেকোনো সহিংসতা থেকে রক্ষা করা এবং শান্তি রক্ষায় কঙ্গোর সরকারকে সহায়তা করা।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযাী, গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এই শান্তিরক্ষা মিশনে মোট ১৭ হাজার ৭৫৩ জন সদস্য রয়েছে। তাদের মধ্যে সৈন্য রয়েছে ১২ হাজার ৩৭৯ জন আর পুলিশ রয়েছে ১ হাজার ৫৯৭ জন। তাদের বাকিদের মধ্যে আছে মিশনের নানা বিষয়ের বিশেষজ্ঞ, সামরিক পর্যবেক্ষক, বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং বেসামরিক সদস্যরা।

সৈন্যবাহিনীতে তৃতীয় সর্বোচ্চ সৈনিক রয়েছে বাংলাদেশের, এক হাজার ৬৪০ হন। তবে সৈন্য সংখ্যার দিক থেকে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে ভারতও পাকিস্তান, যথাক্রমে ১, ৮৩৪ জন আর ১, ৭৬৭ জন।

পুলিশের সংখ্যার দিক থেকেও সেনেগাল আর মিশরের পরেই রয়েছে বাংলাদেশের পুলিশের অবস্থান। কঙ্গোয় গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বাংলাদেশের ২১১ জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিলেন।