এমপি পরিচয়ে গনআজাদী লীগ নেতার বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের অভিযোগ

- আপডেট সময় : ০৩:২১:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৩ ১৭ বার পড়া হয়েছে
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি ঃ
বাংলাদেশ গণআজাদী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে দুইবার অংশ নিয়েছেন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। দুইবারই হয়েছেন পরাজিত। তবে পরাজিত হলেও তিনি পরিচয় দেন এমপি হিসেবে। এই পরিচয় বহন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জে জোরপূর্বক জমি দখল, অবৈধ বালুমহল, সুদের কারবারের মাধ্যমে হয়রানী, মাদক ব্যবসা ও নর্তকী নিয়ে নানা কুকর্মসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ উঠেছে এক গণআজাদী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া গণআজাদী লীগ জেলা শাখার সভাপতি বজলুর রহমানের বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ কোন প্রতিবাদ করতে পারেন না।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বজলুর রহমানের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে বা প্রতিবাদ করলেই বজলুর রহমানের বাহিনী দিয়ে হামলা ও মিথ্যা মামলার শিকার হতে হয় স্থানীয়দের। এমনকি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরকে অভিযোগ দিয়েও মেলেনা সুরাহা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসন থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুইবার অংশ নিয়ে পরাজিত হয়েছেন গণআজাদী লীগ নেতা সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের দক্ষিণচরী মির্জাপুর গ্রামের বাসিন্দা বজলুর রহমান। নির্বাচনে পরাজিত হলেও এমপি পরিচয় ব্যবহার করে হয়েছেন অপরাধ জগতের সম্রাট। ২০১৮ সালে ২ হাজার বোতল ফেনসিডিলসহ আটক হয়ে জেলে থাকলেও জামিনে ফিরে এসে আবারও শুরু করেন নানা অপকর্ম। জাতীয় দিবসের নামে প্রতিবছর ভাড়াটে নর্তকী দিয়ে অশ্লীল নৃত্যের আসর বসান বজলুর রহমান।
বজলুর রহমানের এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তার বাড়ির সামনের মূলফটকেও লেখা রয়েছে বজলুর রহমান এমপি। এই এমপি পরিচয়ে নিজের মাস্তান বাহিনী দিয়ে এলাকায় জোরপূর্বক জমি দখল করেন বজলুর রহমান। এমনকি এই তালিকায় বাদ যায় না ভাই, ভাবীসহ আত্বীয় স্বজনদের জমি দখলও। বজলুর রহমানের এমন অপকর্ম ও অপরাধের কারনে লজ্জিত তার আত্বীয় স্বজনরাও।
স্থানীয় বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম বলেন, এলাকায় তার ব্যাপক প্রভাব। কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারে না। তার বিরুদ্ধে কথা বললেই হতে হয় মামলা-হামলার শিকার। এলাকায় তার গুন্ডা বাহিনী দিয়ে জোরপূর্বক জমি দখল ও অবৈধ বালুমহল পরিচালনা করে বজলু। কয়েক বছর আগে প্রায় দেড় হাজার বোতল ফেনসিডিলসহ আটকের পর জেল থেকে বেরিয়ে এসে আবারও তার কার্যক্রম শুরু করেছে।
স্থানীয় কলেজ শিক্ষক তারেক রহমান বলেন, সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া ব্যক্তি নি:সন্দেহে সম্মানিত লোক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু বজলুর রহমান যেসকল কাজ করে তা খুবই দু:খজনক ও অপ্রত্যাশিত। এতোবড় একজন মানুষ জাতীয় দিবসগুলোতে এলাকায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে বাইরে থেকে নর্তকী নিয়ে অশ্লীল বেহায়াপনা নৃত্য করে। এসব অসামাজিক কাজে অনেকেই বাধা দিলেও তার তোয়াক্কা করে না বজলুর রহমান।
সুদের টাকা দিতে না পারায় জমি দখল করেন এক স্বামী পরিত্যক্তা নারীর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নারী বলেন, পারিবারিক অনটনের কারনে বজলুর রহমানের কাছে কিছু টাকা ধার নিয়েছিলাম। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকাগুলো পরিশোধ করতে পারিনি। পরে লোকজন নিয়ে এসে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দখলে নেয়। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে বলেও কোন লাভ হয়ন, তারা কিছুই করে দিতে পারেনি।
অভিযোগ রয়েছে, বজলুর রহমান তার আপন ভাই জাব্বার আলীর স্ত্রী নারগিস বেগমের জমি জোরপূর্বক দখল করেছেন। এমনকি বাধা দিতে গেলে মারধর ও মামলা দিয়ে হয়রানী করছেন ভাই-ভাবীসহ আত্নীয় স্বজনদের। বজলুর রহমানের ভাবী নারগিস বেগম বলেন, বাড়ির পাশেই পৈত্রিক সূত্রে সাড়ে ৮ কাঠা ফসলী জমি পায়। সেই জমির দুই দিকেই জমি রয়েছে। তাই পুরোটাই তারের বেড়া দিয়ে ঘিরে নিয়ে দখল করেছে। কাগজপত্র কিছুই না থাকলেও শুধুমাত্র পেশিশক্তির উপর ভর করে এসব করছে। বাড়িতে লোকজন নিয়ে হামলা করেছে, ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।
বলজুর রহমানের ভাতিজা ওবাইদুল হক জানান, পারিবারিকভাবেই আমাদের ব্যাপক সুনাম রয়েছে। তবে আমার চাচার অশ্লীল গানবাজনা, সুদের কারবার, জোরপূর্বক জমি দখল, মাদকের কারবার করার কারনে আমাদের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। আমরা বারবার বললেও তাকে সংশোধন করাতে বর্থ্য হয়েছি।